ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) শুনানিতে যেতে হবে। ওই নোটিস পাওয়ার পরে দুশ্চিন্তায় মৃত্যু হয়েছে বাড়ির কর্তার। এমনই অভিযোগ করছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা-২ ব্লক এলাকার এক পরিবার। ওই মৃত্যু নিয়ে শোরগোল এলাকায়। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
মৃতের নাম আলম খান। বয়স ৬৫ বছর। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেশপুর এক নম্বর বুথের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বাড়িতে সদস্য বলতে স্ত্রী। নিঃসন্তান ওই দম্পতি এসআইআর জনশুনানির নোটিস পেয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শুক্রবার আলমের স্ত্রী তথা প্রতিবেশীদের দাবি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই এলাকার বিএলও আশফাকুল্লা খাঁ রাজমিস্ত্রির হাতে হিয়ারিংয়ের নোটিস ধরিয়ে দিয়ে আসেন। সেটা নিয়েই আলম অসুস্থবোধ করেন। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
আলমের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে শাসক এবং বিরোধীর রাজনৈতিক তরজা। মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘‘নোটিসটা দেখার পর চিন্তিত হয়ে পড়েছিল ও। ও বার বার বলছিল, ‘আমাকে তাড়িয়ে দেবে।’ স্বামী ছাড়া আমার কেউ নেই।’’ বৃদ্ধার দাবি, বয়সের কারণে এখন বিশেষ কাজ করতে পারতেন না স্বামী। কোনওরকমে চেয়েচিন্তে চলে যেত তাঁদের। তিনি আরও বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আমাদের আদি বাড়ি। চন্দ্রকোনায় ২৫-৩০ বছর ধরে আছি। এখানকার ঠিকানাতেই আমাদের আধার আর ভোটার কার্ড আছে। কিন্তু ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় বাবার নামে ফর্ম পূরণ করেছিলেন বিএলও।’’
অন্য দিকে, বিএলও বলেন, ‘‘ওর বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা নাগাদ নোটিস দিতে গিয়েছিলাম। সোমবার হিয়ারিং ছিল। শুনলাম, উনি মারা গিয়েছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন, এটা ঠিকই।’’ আলমের প্রতিবেশী হাসিবুর খান বলেন, ‘‘গতকাল নোটিশ হাতে পাওয়ার পর থেকেই ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। গ্রামের লোকেদের দেখাতে থাকে ওই নোটিস। বলছিল, ‘এ বার নিয়ে চলে যাবে’। তার পরেই বুকে ব্যথা হয়।’’
আরও পড়ুন:
তবে বিজেপি নেতা সুকান্ত দোলুইয়ের বক্তব্য, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। এসআইআর নির্বাচন কমিশন করছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে শাসকদল। এর আগেও হয়েছে এটা। তখন কিন্তু রাজ্য সরকার সাহায্য করেছে। এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি তৈরি করছে ওরা।’’ তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি ইসমাইল খান পাল্টা বলেন, ‘‘পশ্চিমবাংলায় যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কাজ করছে, তাতে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে মানুষের। এতগুলো মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। তার পরেও এদের কোনও চিন্তাভাবনা নেই!’’ তিনি জানান, মৃতের পরিবারের পাশে শাসকদল থাকবে। যথাসাধ্য সাহায্য করা হবে বৃদ্ধাকে।