Advertisement
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Panchayat Election

হাতে সময় কম, মনোনয়নেই প্রশ্ন

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজ্যের নতুন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন। আজ, শুক্রবার থেকে শুরু মনোনয়ন জমা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি। Sourced by the ABP

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ০৯:১৩
Share: Save:

দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে আগামী পঞ্চায়েত ভোটের। মাত্র এক দফায় আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু ভোট ঘোষণা থেকে নির্বাচন— মাঝে সময় ঠিক এক মাস। আর মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য সময় থাকছে সাকূল্যে পাঁচ দিন। এত অল্প সময়ের মধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা আদৌ কতটা সম্ভব! প্রশ্ন যেমন বিরোধীদের, তেমনই প্রশ্ন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অন্দরেও।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজ্যের নতুন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন। আজ, শুক্রবার থেকে শুরু মনোনয়ন জমা। চলবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। রবিবার কোনও মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে না। আগামী ২০ জুন মনোনয়ন পত্র প্রত্যহারে শেষ দিন। আগামী ১৭ জুন স্ক্রুটিনি হবে। আগামী ১১ জুলাই নির্বাচনের গণনা। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের তরফে পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করার পর প্রধান সমস্যা হবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া। কারণ, মাত্র ছ'দিন সময় দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের দুটি সাংগঠনিক জেলা কাঁথি এবং তমলুকে তৃণমূলের একাধিক শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। ঐক্যমত্তের ভিত্তিতে এত কম সময়ের মধ্যে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে আদৌ মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব হবে তো! একই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বিরোধী গেরুয়া শিবিরেও।

বিরোধীরা অভিযোগ করছে, আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে সমস্ত পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রাখতে এবং বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত গড়তে মরিয়া রাজ্যের শাসকদল। তার জন্যই তারা নির্ধারিত সময়ে পঞ্চায়েত ভোট করেনি। পাশাপাশি, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের হিংসার ঘটনা তুলে ধরে এবারের পঞ্চায়েত ভোট কতটা নির্বিঘ্নে হবে, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য আমরা কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি মণ্ডল থেকে আমরা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রার্থীদের নাম অনুসন্ধান করেছি। গত পঞ্চায়েত ভোটে গোটা বাংলা রক্তাক্ত হয়েছে। এবার যদি তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাহলে তাঁরা সকলেই মনোনয়ন জমা দেবেন।’’ একই রকম ভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করে সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে দেওয়া হয়নি। এবার যদি সেই পরিস্থিতি না হয়, তাহলে আমরা স্বাভাবিকভাবে মনোনয়ন করতে পারব। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সব আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’ বিরোধীরা যখন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে শুরুতেই আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন, তখন অন্য দাবি করছে রাজ্যের শাসক দল। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পীযূষ ভূঁইয়া বলছেন, ‘‘গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা পঞ্চায়েত ভোটের জন্য প্রস্তুত। প্রতিটি ব্লক সভাপতি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন। নব জোয়ার কর্মসূচিতে ও ভোটাভুটি হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্ব চূড়ান্তভাবে যাঁদের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবেন, তাঁরাই মনোনয়নজমা দেবেন।’’

এক মাসের মধ্যে গোটা পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারা নিয়ে জেলা প্রশাসন কতটা প্রস্তুত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আগেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ব্যালট বাক্সগুলিকে বারকোড প্রযুক্তিতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারজন মহকুমা শাসক এবং ২৫ জন বিডিওকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটের জন্য জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুক্রবার থেকে প্রতিটি ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শুরু হবে।’’

অবশ্য সব কিছু ছাপিয়ে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে থেকে যাচ্ছে প্রকৃতিকে নিয়েও প্রশ্ন। এমনিতেই এ বছর রাজ্যে বর্ষা ঢুকবে দেরিতে। সুতরাং জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বর্ষা থাকার কথা। জেলাবাসী আগে কেলেঘাই, কপালেশ্বরী এবং বাগাই নদী বাঁধ ভাঙনের ছবি দেখেছে। গত বছর জেলার ভগবানপুর, পটাশপুরের মত কয়েকটি ব্লক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এবার বর্ষাতে তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেবে, না কি পঞ্চায়েত ভোট করাবে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভগবানপুরের ইটাবেড়িয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলছেন, ‘‘জুলাই মাসে বর্ষাকালে এমনিতেই চাষবাসের মরসুম শুরু হয়ে যায়। তারপর নদী বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা তো থাকছেই। আসলে এবার পঞ্চায়েত ভোট হবে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগকে ফেলার জন্যই।’’

যদিও জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘যখন যা পরিস্থিতি হবে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে সেই অনুযায়ী মোকাবিলাকরা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE