E-Paper

সরকারি উদ্যোগে বিধবা দিবস, কটাক্ষ বিরোধীর

তিনি চেয়েছিলেন, বিধবারা অত্যাচার, অবমাননার জীবন থেকে মুক্তি পান। আজ এত বচ্ছর পরেও সেই বিধবা পরিচয়েই তাঁদের আলাদা করছে সরকার।

সৌমেন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৫ ০৯:৩৩
এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দিনটি ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই মতো রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আগামী ২৩ জুন পালিত হবে ‘বিধবা দিবস’। এই মর্মে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা পৌঁছেছে প্রতিটি জেলায়। জেলা প্রশাসনের তরফেও প্রতিটি ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতকে দিনটি পালনের নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ডিপিআরডিও দেবদুলাল বিশ্বাস মানছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশক্রমে ব্লক প্রশাসনকে আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস পালন করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।’’ নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, বিধবাদের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন সামাজিক সহায়তা প্রকল্প, তাঁদের উপরে নির্ভরশীল পারিবারিক সদস্যদের জন্য কিছু কল্যাণমূলক কর্মসূচি করতে হবে। প্রতিটি ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিধবা দিবসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির হবে। বিধবা ভাতা সংক্রান্ত সমস্যা, আধার কার্ডের সমস্যা থাকলে তার সমাধান করা হবে। কেবলমাত্র বিধবা এবং বিশেষ করে ৮০ ঊর্ধ্বের বিধবাদের জন্যই হবে শিবির। স্বাস্থ্যসাথীতে নাম অন্তর্ভুক্তি হয়েছে কিনা দেখা হবে, আইনগত সমস্যা সমাধানেরও উদ্যোগ করা হবে। তা ছাড়া, বাড়িতে গিয়ে বিধবা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।তবে সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে এক দিকে যেমন রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে আধুনিক এই যুগে দাম্পত্য পরিচয়ে এক জন মহিলাকে চিহ্নিত করে এমন আয়োজন কি খুব জরুরি’। নন্দীগ্রামের দেবীপুর গ্রামের গৃহবধূ মায়ারানি দুয়ারি বলেন, ‘‘আমার স্বামী ২০২২ সালে মারা গিয়েছেন। একাধিকবার আবেদন করেও বিধবা ভাতা জোটেনি। বিধবা এখন বিধবা দিবস পালন মানে সমাজের কাছে আমাদের আরও সম্মানহানি।’’ হলদিয়ার স্কুল শিক্ষিকা সুচিস্মিতা মিশ্র মনে করালেন, ‘‘বিদ্যাসাগর বিবাহ বিবাহ চালু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, বিধবারা অত্যাচার, অবমাননার জীবন থেকে মুক্তি পান। আজ এত বচ্ছর পরেও সেই বিধবা পরিচয়েই তাঁদের আলাদা করছে সরকার। এটা অসম্মানজনক।’’ হলদিয়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কর্মরত সূর্যতপা পন্ডার মতে, ‘‘নারী হোক বা পুরুষ, বৈবাহিক অবস্থান কখনও পরিচয় হতে পারে না। এখনকার সমাজে এমন উদ্যোগ, ভাবাই যায় না।’’রাজনৈতিক মহল আবার এর পিছনে ভোট অঙ্ক দেখছে। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। আর মহিলারা তৃণমূলের মস্ত ভোট ব্যাঙ্ক। তাই প্রতিটি স্তরের মহিলাকে শাসকদলের সঙ্গে রাখতেই এই সরকারি উদ্যোগ বলে অনেকের অনুমান। বিরোধীরাও বিষয়টি নিয়ে সরব। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘এখন মহিলারা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সেটা বুঝতে পেরেই এই সব আয়োজন হচ্ছে।’’ তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অলিখিত ভাবে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করেন। মহিলাদের সম্মান জানিয়ে প্রকল্প রয়েছে। এই উদ্যোগও বিধবা মহিলাদের সম্মান জানিয়ে তাঁদের সাহায্য করার জন্য।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy