ভোটের দিন চন্দ্রকোনার রাস্তায় পুলিশি টহল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ঘটনা বলতে দু’টি। এক ওয়ার্ডের প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ। ঘন্টা দুয়েক পরেই যাঁর খোঁজ মেলে। দ্বিতীয় ঘটনা, ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা। যা আবার আটকে দিল সিপিএমের মহিলা বাহিনী। শনিবার প্রথম ঘটনাটি ঘটে চন্দ্রকোনায়। দ্বিতীয়টি ক্ষীরপাইয়ে। এ ছাড়াও বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, বিরোধীদের বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার মতো কিছু অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। মারামারি, সংঘর্ষ, বোমাবাজি দূর, আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনাই ঘটেনি চন্দ্রকোনা ও ক্ষীরপাই পুর-নির্বাচনে। চন্দ্রকোনায় ভোটের হার ৯১.৬০ শতাংশ আর ক্ষীরপাইয়ে ৮৮.৭০ শতাংশ।
ভোটের আগের রাত থেকেই অবশ্য তৃণমূলের বহিরাগতরা ভিড় জমিয়েছিল। ঠিক ছিল, বিরোধীদের একজনকেও বুথে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু ভোটের সময় ঘন ঘন বুথের সামনে ঘুরল পুলিশের টহলদারি ভ্যান। শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত সরিয়ে দেওয়া হল। বুথের ভেতরে গিয়েও নজরদারি চালাল পুলিশ। ফলে, শান্তিপূর্ণই হল ভোট। চন্দ্রকোনার অতসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল কর্মী সৌরভ চক্রবর্তী হোক বা ক্ষীরপাইয়ের তৃণমূল প্রার্থী সুজয় পাত্র সকলেই বলছেন, “সিপিএম ভোটের দু’-তিন দিন আগে থেকেই বাড়িতে গিয়ে শাসাত। ভোট দিতে গেলে মেরে হাত-পা ভেঙে দিত। আমরা কিন্তু কাউকে মারধর করিনি। দেখুন সকলেই ভোট দিতে এসেছে।”
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, বেশিরভাগ বুথেই ছাপ্পা হয়েছে। বুথে ঢোকার অনেক আগেই বিরোধী সমর্থকদের আটকে দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে বেরিয়েও সকলে ভোট দিতে পারেননি। চন্দ্রকোনার সিপিএম নেতা গুরুপদ দত্ত যেমন বলছিলেন, “বুথ থেকে আমাদের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুপর্ণা কুণ্ডুকে অপহরণ করল তৃণমূল। বুঝতেই পারছেন, এরপর ভোট কত অবাধ হয়েছে!” বিজেপি নেতা ধীমান কোলের আবার অভিযোগ, চন্দ্রকোনার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী বর্ণালী চৌরা ও তাঁর স্বামী সুশান্তকে বুথেই ঢুকতে দেয়নি তৃণমূল। পুলিশের সহযোগিতায় তৃণমূল ছাপ্পা দিয়েছে বলেও অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধও হয়েছে। ক্ষীরপাইয়ের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বামারিয়া প্রাথমিক স্কুলের বুথে তৃণমূলের বহিরাগতরা সিপিএমের প্রমীলা বাহিনীর বাধায় রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছে।
এটা ঠিক এই দুই পুরসভায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ভোটের সময় ততটা দাপাদাপি করতে হয়নি। অভিযোগ, পুলিশই সংঘর্ষ এড়িয়ে ছাপ্পার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কী ভাবে হয়েছিল সেই বন্দোবস্ত? জানা গিয়েছে, টহলদারির মাঝেই একটা সময় উধাও হয়ে গিয়েছে পুলিশ। আর ঠিক সেই সময়েই অবাধে ছাপ্পা চলেছে। পালা করে প্রতিটি বুথে এমনটা করা হয়েছে। তাতে দীর্ঘক্ষণ বুথ জ্যামের ঘটনা ঘটেনি। জানা গিয়েছে, পুলিশের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের মধ্যে যে সব বুথে ছাপ্পা দেওয়া শেষ হয়নি, তার জন্য পুলিশ আধিকারিকদের কাছে ধমকও খেয়েছেন তৃণমূল নেতারা।
কোনও অভিযোগই স্বীকার করছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের চন্দ্রকোনা ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারী ও ক্ষীরপাই ব্লকের সভাপতি চিত্ত পাল দু’জনেরই দাবি, “দলীয় কর্মীদের উপর আমাদের নির্দেশ ছিল, কোথাও কোনও রকম গণ্ডগোল যেন না হয়। সকলে যেন নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটের দিন সেটাই হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy