আলু উঠছে। হিমঘর খুলেছে। প্রান্তিক চাষিদের জন্য হিমঘরে প্রশাসনিক ‘কোটা’র ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত সেই ‘কোটা’র সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ নেই প্রান্তিক চাষিদের। তেমন আবেদনই আসেনি। আলুর বন্ড নিয়ে কালোবাজারি ঠেকাতে এবং ছোট চাষিদের বাঁচাতেই এই প্রশাসনিক ‘কোটা’র ব্যবস্থা রয়েছে।
গত ১ মার্চ থেকে হিমঘরগুলি খুলেছে। সরকারি নির্দেশ মতো ২০ মার্চ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য হিমঘরের মোট মজুত জায়গার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। গতবার এই পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্লকে কৃষি দফতরে শিবির করে হিমঘরে আলু রাখতে ইচ্ছুক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। ব্লকস্তরে এই সব আবেদন খতিয়ে দেখা হবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্য সাড়া নেই। এখনও পর্যন্ত নামমাত্র আবেদন এসেছে।
কারণ কী? শালবনির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সমর নন্দীর মতে, ‘‘এ বার বন্ড পেতে সমস্যা হচ্ছে না। আর আমাদের এ দিকের বেশিরভাগ চাষির ২- ৩ কিংবা ৩- ৪ বিঘা জমি রয়েছে। বেশি জমি নেই। প্রান্তিক চাষিরা জমি থেকে তোলার পরপরই আলু ব্যবসায়ীদের বেচে দিচ্ছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গোড়ার দিকে আলুর দামটা খানিক কম ছিল। কুইন্টাল পিছু ৫৫০- ৬০০ টাকার মতো। এখন প্রায় ৮০০ টাকা দাম আছে। ব্যবসায়ীকে বেচলে চাষিরা হাতেনাতে নগদ পাচ্ছেন।’’ গড়বেতার গরঙ্গার আলু চাষি সুনীল কুন্ডু আড়াই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। দেড় বিঘা জমির আলু তুলে হিমঘরে রেখেছেন ইতিমধ্যে। বন্ড পেতে সমস্যা হয়নি বলেই দাবি। সুনীল বলছেন, ‘‘এক বিঘার মতো জমির আলুটা আর কয়েকদিন পরে তুলব। বন্ড না পেলে তখন প্রশাসনিক ওই ব্যবস্থায় আবেদন করব।’’ জেলা হিমঘর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ লোধা বলেন, ‘‘এখন হিমঘরে গেলেই চাষিরা সহজেই প্রয়োজন মতো আলু রাখতে পারছেন। ৩০ শতাংশ কোটার ক্ষেত্রে আবেদন জমা পড়েনি।’’ জমি থেকে সব আলু ওঠেনি। পরের দিকে এমন সমস্যা হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
আলু নিয়ে এ বার বাড়তি সতর্ক প্রশাসন। সম্প্রতি মেদিনীপুরে জেলাস্তরের এক বৈঠক হয়েছে। আলু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে বৈঠকে। ছিলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি, ডিআরডিসি’র প্রজেক্ট ডিরেক্টর গোবিন্দ হালদার প্রমুখ। ঠিক হয়েছে, সহায়কমূল্যে আলু কেনায় গতি আনা হবে। চাষির অভাবি বিক্রি রুখতে সরকার আলুর সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করেছে ৯০০ টাকা কুইন্টাল। একাংশ চাষির অবশ্য দাবি, এই দামে আলু বিক্রি করে লাভ হবে না। কুইন্টালপিছু ৩০০ টাকা বৃদ্ধি করা উচিত। সরকারি নির্দেশে জানানো হয়েছে, এ বার মাথাপিছু ৭০ বস্তা অর্থাৎ, ৩৫ কুইন্টাল আলু হিমঘরে মজুত রাখতে পারবেন চাষিরা। গত বছর এই সীমা ছিল মাথাপিছু ৫০ বস্তা অর্থাৎ, ২৫ কুইন্টাল। পশ্চিম মেদিনীপুরে হিমঘরের সংখ্যা খুব কম নয়। এই জেলায় চালু হিমঘর রয়েছে ৮৯টি। কত আলু থাকতে পারে? এই ৮৯টি চালু হিমঘর আলু রাখা যাবে সবমিলিয়ে ১,৭২,০৪,১৭৯ কুইন্টাল। ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রশাসনিক ‘কোটা’য় ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত থাকছে। অর্থাৎ, ৫১,৬১,২৫৩ কুইন্টাল আলু রাখার জায়গা সংরক্ষিত থাকছে। এই জেলায় বছরে চাহিদা প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। বাকিটা যায় ভিন্ জেলায়, ভিন্ রাজ্যে।
আলু ব্যবসায়ীদের অনেকেই মানছেন, এ জেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়, তার ১৫ শতাংশ জেলায় থাকে। জেলার চাহিদা পূরণে। বাকি ৮৫ শতাংশই বাইরে চলে যায়। অন্য জেলায়, অন্য রাজ্যে। আলুর বন্ড নিয়ে কালোবাজারির আশঙ্কা থাকেই। এ বারও তাই বন্ডের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা হয়েছে। নির্দেশ হয়েছে, একজন চাষি সর্বাধিক ৩৫ কুইন্টাল আলু মজুত রাখতে পারবেন হিমঘরে। তার বেশি নয়। এখন দাম মিলছে কুইন্টালপিছু ৭০০- ৮০০ টাকা। পরে যদি দাম আরও কমে যায়! এই আশঙ্কায় আলু বেচে দিচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অনেকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)