Advertisement
E-Paper

Pradip Sarkar: চেয়ার হারিয়েও ‘চেয়ারম্যান’ বাম প্রদীপ

২০১৩ সালের পর থেকে আর তিনি পুরপ্রধান নন। অথচ তাঁকেই পুরপ্রধান ভেবে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ তাঁর মোবাইলে ফোন করছেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:০১
প্রদীপ সরকারের নাম ও মোবাইল নম্বর সুডার ওয়েবসাইটে (চিহ্নিত)।

প্রদীপ সরকারের নাম ও মোবাইল নম্বর সুডার ওয়েবসাইটে (চিহ্নিত)।

কয়েক দিন আগের ঘটনা। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক চলছে। এমন সময়ে বেজে উঠল ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের ফোন। অপর প্রান্তের এক মহিলা নিজেকে কলকাতার লোকশিল্পী পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করলেন, ‘‘চেয়ারম্যান সাহেব, একটু দেখবেন এবার যেন জঙ্গলমহল উৎসবে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাই।’’

বিভ্রান্তির এমন ফোনের বিড়ম্বনায় জেরবার ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ। ২০১৩ সালের পর থেকে আর তিনি পুরপ্রধান নন। অথচ তাঁকেই পুরপ্রধান ভেবে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ তাঁর মোবাইলে ফোন করছেন। গত আট বছর ধরে এই সমস্যায় জেরবার তিনি।

কখনও ফোনে একটি ট্র্যাক্টর সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, ‘‘পুরসভায় ট্রাক্টর কেনা হবে বলে শুনছি। আমাদের সংস্থাকে সুযোগ দিন।’’ কয়েক মাস আগে চিকিৎসার জন্য ভেলোরে গিয়েও এরকম নানা ফোন পেয়েছেন। কলকাতার একটি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি ফোন করে পুরসভার বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অনুরোধও করেছেন তাঁকে।

রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে থাকা ‘সুডা’-র (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান হিসেবে প্রদীপ সরকারের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর রয়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম পুরসভার জেলা হিসেবে উল্লেখ আছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নাম। সেখানে পুরসভার ল্যান্ডফোন নম্বরও দেওয়া রয়েছে। সেই ল্যান্ডফোনটি আবার দীর্ঘদিন ধরে অচল। তাই সরাসরি কথা বলার জন্য অনেকেই প্রদীপের মোবাইলে ফোন করেন। তাই জন্যই এই বিড়ম্বনা।

২০১৩ সালের নভেম্বরে পুর নির্বাচনে পুরবোর্ডের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। ২০১৩-২০১৮ পর্যন্ত তৃণমূলের নির্বাচিত পুরবোর্ডের পুরপ্রধান ছিলেন শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব, যিনি দুর্গেশ নামে বেশি পরিচিত। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তৃণমূলের পুরবোর্ডের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আর পুরভোট হয়নি। ওই বছরের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পুরসভার প্রশাসক ছিলেন তৎকালীন মহকুমাশাসক সুবর্ণ রায়। ওই বছরের ২০ নভেম্বর রাজ্য সরকারের মনোনীত পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারপার্সন হন প্রশান্ত রায়। চলতি বছরের অগস্টে কবিতা ঘোষকে নতুন পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রদীপ জানাচ্ছেন, প্রায়ই যাঁদের কাছ থেকে তিনি এমন ফোন পাচ্ছেন, তাঁরা সকলেই সুডা-র ওয়েবসাইট থেকে পুরপ্রধানের নম্বর পেয়ে কল করছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সুডা-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পুরপ্রধান হিসেবে আমার নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর এখনও রয়েছে। বিষয়টি সংশোধনের জন্য যথাস্থানে বহুবার জানিয়েছি। যাঁরা ফোন করেন, তাঁদের বলি আমি আর পুরপ্রধান নই। কিন্তু অনেকেই সেটা বিশ্বাস করতে চান না।’’

২০০২ সালে বাম পুরবোর্ডের আমলে পুরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি হয়। পরে তৃণমূলের পুরবোর্ডের সময়ে সেটি পুরোদস্তুর চালু করা হয়। তবে সেখানেও কোনও তথ্য মেলে না বলেই চলে। ওয়েবসাইটে নাগরিকদের অভিযোগ জানানোর উপায় নেই। পর্যটন জেলাশহর ঝাড়গ্রামটি পুরসভার ওয়েবসাইটে মহকুমাশহর হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি পুরসভার ওয়েবসাইটে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। কিন্তু ঝাড়গ্রাম পুরসভার ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত বিভাগ থাকলেও সেই সুযোগ মেলে না। পুরসভার ওয়েবসাইটে জঞ্জাল পরিষ্কার, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ও মিউটেশন, নিকাশি পরিষ্কার, বাড়ির প্ল্যান, বহুতলের প্ল্যান সংক্রান্ত তথ্য দেখা গেলেও অনলাইন পরিষেবা মেলে না।

ঝাড়গ্রাম পুরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইটেও চেয়ারপার্সন হিসেবে প্রশান্ত রায়ের নাম রয়েছে। বর্তমান চেয়ারপার্সন কবিতা ঘোষ বলছেন, ‘‘পুরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইটটি আপডেট করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সুডা-র ওয়েবসাইটের তথ্য সংশোধনের জন্য বিভাগীয় দফতরকে জানানো হবে।’’ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এটি পুরনো ওয়েবসাইট। তবে সেটাও তো অনেকে সার্চ করেন। তাই সেটি সরিয়ে দেওয়াই কাম্য।’’

Pradip Sarkar chairman Jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy