এই কাঁচা পাতকুয়োর ঘোলা জলই ভরসা ডালকাটি গ্রামের লোধা পাড়ার বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় কাঁচা পাতকুয়ো থেকে জল তুলছিলেন বাসন্তী ভক্তা, ননীবালা ভক্তারা। কাঁচা পাতকুয়োর ঘোলাজলই খান তাঁরা। সেই জলেই হয় রান্নাবান্না আর গেরস্থালির কাজ। ঝাড়গ্রাম ব্লকের লোধাশুলি পঞ্চায়েতের ডালকাটি গ্রামের লোধা পাড়ার ২১টি পরিবারের ভরসা বলতে ওই কাঁচা পাতকুয়োই।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। সরকারি বরাদ্দে লোধাদের জন্য গ্রামে গত বছর সাব মার্সিবল পাম্প বসিয়ে ট্যাপের মাধ্যমে পরিস্রুত জল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু কাজ চলাকালীন গত বছর ডিসেম্বরে ঠিকাদারের বোরিং করার যন্ত্রাংশ চুরি যায়। তারপর বোরিং করে পাইপ বসানো হয়। রাতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বোরিংয়ের পাইপও চুরি হয়ে যায়। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন ঠিকাদার। তারপর থেকে বন্ধ রয়েছে কাজ। পরিস্রুত জল আর মেলেনি। লোধা উন্নয়নে জেলায় রয়েছে লোধা সেল। রাজ্যে সরকার লোধাদের উন্নয়নে দরাজহস্ত বলেও দাবি করেন শাসকদলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরা। অথচ ঝাড়গ্রাম জেলা শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরের ডালকাটি গ্রামের ছবিটা এমনই।
ক্ষোভ ঝরে পড়ল ননীবালা বাসন্তীদের কথায়। তাঁরা বলছেন, ‘‘গার্ড ওয়ালবিহীন ওই কাঁচা পাতকুয়োয় কিছুদিন আগে একটি কুকুর পড়ে গিয়ে মরে যায়। আমরাই কুকুর তুলে জলে চুন দিয়ে সেই জল পান করছি। এখনও পরিস্রুত জলের ব্যবস্থাটুকু হল না।’’ পাতকুয়োর ঘোলা জল ব্যবহারের ফলে প্রায়ই পেটের রোগে ভোগেন ওই লোধা পাড়ার বাসিন্দারা।
গত ফেব্রুয়ারিতেই লোধাপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা ভোলানাথ ভক্তা সমস্যার কথা লিখিতভাবে জমা দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম বিডিও-র দফতরে। তারপরে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলায়নি। প্রশাসনের এক সূত্রের খবর, গত বছর ডিসেম্বরে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের বরাদ্দ সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় ডালকাটি গ্রামের লোধাপাড়ায় সৌরচালিত সাব মার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে জল সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর ঠিকাদারকে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়। কাজ শুরু করেন তিনি। এরপরে ২৫ ডিসেম্বর রাতে বোরিং করার যন্ত্রটি চুরি হয়ে যায়। ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ জানানো হলে রাতে এলাকায় দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। বোরিংয়ের কাজ শেষ করেন ঠিকাদার। কিন্তু ৩ ফেব্রুয়ারি ভুগর্ভস্থ পাইপ চুরি যায়। বিষয়টি লিখিতভাবে পুলিশ ও পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষকে জানান ঠিকাদার প্রদ্যুৎ মাজি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। ঠিকাদার বলছেন, ‘‘ভাড়ায় বোরিং করার যন্ত্র দিয়ে কাজ করার সময়ে যন্ত্রটি চুরি যায়। পরে বোরিং করার পরে পাইপও উপড়ে তুলে নিয়ে চলে যায় চোরেরা। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তাই কাজ শেষ করতে পারিনি। বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন ঠিকাদারের কাছে টাকা দাবি করেছিলেন। তিনি টাকা না দেওয়াতেই সমস্যা। যদিও প্রদ্যুৎ এ বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ।
পশ্চিমবঙ্গ লোধা শবর সমাজের রাজ্য সভাপতি মৃণাল কোটাল বলছেন, ‘‘লোধাদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার আন্তরিক। কিন্তু নিচুতলায় সেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ হচ্ছে না। লোধারা পরিস্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত, এ বড় লজ্জার বিষয়। অবিলম্বে প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।’’ ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা সরেন মানছেন, ‘‘ডালকাটির লোধাপাড়ায় পরিস্রুত জলের সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় কিছু লোকজনের অসহযোগিতার কারণেই কাজটা হয়নি। দু’বার ঠিকাদারের সরঞ্জাম চুরি হয়েছে। কাজটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ’’ সমস্যা মেটাতে প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy