Advertisement
১১ মে ২০২৪
Solar Eclipse

মেঘে ঢাকা সূর্য, ঘোচেনি মনের আঁধারও

মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রামের আকাশ এ দিন সকাল থেকেই ছিল মেঘলা। কোথাও কোথাও এক-দু'পশলা বৃষ্টিও হয়েছে।

গ্রাস: রবিবার দুপুরে সূর্যগ্রহণের সময়ে। ঝাড়গ্রাম (বাঁ দিকে),  মেদিনীপুর শহরে (মাঝে) ও ঘাটালে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ, সৌমেশ্বর মণ্ডল ও কৌশিক সাঁতরা

গ্রাস: রবিবার দুপুরে সূর্যগ্রহণের সময়ে। ঝাড়গ্রাম (বাঁ দিকে),  মেদিনীপুর শহরে (মাঝে) ও ঘাটালে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ, সৌমেশ্বর মণ্ডল ও কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ০৬:১৫
Share: Save:

রবিবাসরীয় সূর্যগ্রহণে সংস্কার আর বিজ্ঞানমনস্কতা— পিঠোপিঠি দুই-ই দেখল পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম। খড়্গপুরে ভিন্ রাজ্যের রেলকর্মী যখন নির্জলা থাকলেন, তখন দিব্যি রান্না করা দুপুরের খাবার খেয়ে দিবানিদ্রা গেলেন গোপীবল্লভপুরের আদিবাসী শিক্ষক। আর দুই জেলার মানুষই এ দিন হন্যে হয়ে খুঁজেছেন মেঘে ঢাকা সূর্যকে। গ্রহণের মুহূর্তে মহাজাগতিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন।

মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রামের আকাশ এ দিন সকাল থেকেই ছিল মেঘলা। কোথাও কোথাও এক-দু'পশলা বৃষ্টিও হয়েছে। মেঘলা আকাশেও বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে উৎসুক ছিলেন দুই জেলার অনেকেই। তবে মেদিনীপুর শহরের ভালভাবে গ্রহণ দেখতে না পাওয়ায় নিরাশ হন অনেকে। করোনা পরিস্থিতির জন্য শিবির করে গ্রহণ দেখানোর তেমন আয়োজন ছিল না। তবে বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেকেই একসঙ্গে আকাশে উঁকি মেরেছেন। বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সহ-সম্পাদক বাবুলাল শাসমল বলেন, ‘‘আকাশ মেঘলা ছিল। তাই গ্রহণ দেখায় সমস্যা হয়েছে।’’ বিজ্ঞান সংস্থা ‘ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটি’র কর্মকর্তা তপন দাস আবার বলেন, ‘‘মেঘলা আকাশে কিছুটা সমস্যা হলেও মেদিনীপুর থেকে সূর্যগ্রহণ ভালই দেখা গিয়েছে।’’ ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’ ও ‘বেলদা সায়েন্স’-এর পক্ষ থেকে বেলদা-সহ কয়েকটি জায়গায় সূর্যগ্রহণ দেখানোর আয়োজন করা হয়।

মেদিনীপুরেও এ দিন গ্রহণ ঘিরে জল্পনা, গুজব ছড়িয়েছে। শহর জুড়ে ছড়িয়েছে প্রশ্ন— গ্রহণ কি করোনাকে কাবু করবে? বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মীরা মানুষকে সচেতন করতে এ দিন পথেও নামেন। ঘাটালে বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা সচেতন করেন।

তবে সচেনতার ধার ধারেননি খড়্গপুরের নিমপুরার বাসিন্দা রেলকর্মী চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো অনেকেই। চন্দ্রশেখর এ দিন গ্রহণ শুরুর অনেক আগেই খাওয়াদাওয়া সেরে নেন। আর স্নান-সহ বাকি কাজ সারেন গ্রহণের শেষে। গ্রহণ চলাকালীন এক ফোঁটাও জল খাননি আদতে ভিন্ রাজ্যের মানুষটি। তাঁর বিশ্বাস, ‘‘বিজ্ঞান তো অনেক কথাই বলে। কিন্তু তা বলে যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কার কি বর্জন করা যায়!’’

গ্রহণের সময় রেলশহরের রাস্তাঘাট, দোকান, বাজার ফাঁকাই ছিল। গোলবাজারের ব্যবসায়ী সুরজ খটিক বলেন, ‘‘আমরা বিহারি পরিবারগুলি একেবারে নির্জলা উপোস করে মুখে তুলসীপাতা রাখি, গ্রহণ শেষে খেয়েছি।’’ অনেকেই উঁকি মারেন আকাশপানে। গ্রহণ কালে শাঁখ বাজান, উলুধ্বনি দেন অনেকেই। কেউ সান ফিল্টার নিয়ে, কেউবা কালো রোদ চশমা নিয়েই গ্রহণ দেখেন। অনেকে এক্সরে প্লেট নিয়েই আকাশের দিকে তাকান। ঘাটালের কোন্নগরের গৃহবধূ মলয়া আদক বলেন, ‘‘সাতসকালেই রান্না করে খাওয়াদাওয়া মিটিয়ে নিয়েছিলাম।’’

ঝাড়গ্রামের লোকসংষ্কৃতির গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলায় আদিবাসী মূলবাসী সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মের মধ্যে গ্রহণ নিয়ে সংস্কার এখন আর সেভাবে নেই।’’ যদিও সাঁওতালি সাহিত্যিক সারিধরম হাঁসদা বলছেন, ‘‘সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে আদিবাসী সমাজের মধ্যে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস এখনও রয়েছে। তবে আমি গ্রহণের মধ্যেই খেয়েছি। মেঘলা আকাশে গ্রহণ অবশ্য দেখতে পাইনি।’’ ঝাড়গ্রামের অনেক এলাকাতেই রান্না ও খাওয়াদাওয়া চলেছে। গোপীবল্লভপুরের কায়শোল গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষক রতন টুডুর কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই কুসংস্কার মানে না। গ্রহণের সময় রান্নাও হয়েছে, খেয়েওছি।’’ বিনপুরের প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদাও সংস্কারে বিশ্বাসী নন। নয়াগ্রাম এসসি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক প্রসেনজিৎ প্রধান একটা বিজ্ঞান সংস্থা চালান। গত ডিসেম্বরের সূর্যগ্রহণে সচেতনতার প্রচার করেছিলেন। ফলও মিলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘সে বার যাঁরা গ্রহণে অরন্ধন করেছিলেন, তাঁরাই এ বার রান্না করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Solar Eclipse Midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE