শ্রদ্ধা: চাচার জন্য নীরবতা পালন। —নিজস্ব চিত্র।
কাজ নিয়ে কালেক্টরেটে এলেই ফেডারেশনের অফিসে ঢুঁ মারতেন। খানিক্ষণ বসে, চা খেয়ে তবেই কালেক্টরেট ছাড়তেন। প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপালের স্মরণসভায় এমন সব পুরনো কথাই উঠে এল শুক্রবার। স্মৃতিচারণায় ফিরে তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আহ্বায়ক অরুণ প্রতিহার বললেন, “চাচা অন্য ধাতের মানুষ ছিলেন। সকলের সঙ্গে মিশতেন। সকলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেন।’’ পাশে তখন ফেডারেশনের প্রবীণ রাজ্য নেতা তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি।
চাচার মন যে কত বড় ছিল, স্মৃতিচারণায় সে কথাও উঠে আসে। অরুণবাবু বলছিলেন, “একদিন বিকেলে চাচা ফেডারেশনের অফিসে এসেছিলেন। চাচাকে দেখে মৃগেনদা উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। নিজের চেয়ার ছেড়ে সেই চেয়ারে চাচাকে বসতে বলেছিলেন। চাচা রাজি হননি। বলেছিলেন, ওই চেয়ারটা ফেডারেশনের সম্পাদকের জন্য। কোনও ব্যক্তির জন্য নয়। মৃগেন মাইতি সম্পাদক। তিনিই ওই চেয়ারে বসবেন। আমি পাশের চেয়ারে বসব।’’ তা শুনে অনেকের চোখেই তখন জল।
তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে শুক্রবার এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুরে ফেডারেশন হলে। সভার শুরুতেই মৃগেনবাবু বলে দেন, “এটা কোনও দলীয় কর্মসূচি নয়। চাচা সকলের বিধায়ক ছিলেন। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতেন। চাচাকে দেখলেই মাথা নত করতে ইচ্ছে হত।’’ স্মরণসভায় চাচার ছবি রাখা ছিল। সভা শুরুর আগে সেখানে মালা দেন সকলে।
বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে গত ৮ অগস্ট কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয় খড়্গপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহ পালের, চাচা নামেই যাঁর বেশি পরিচিতি। চাচা ছিল জীবন্ত ইতিহাস। দশ-দশবার বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন। প্রথম ভোটে দাঁড়ান ১৯৬২ সালে। ৭১-এ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন। দাড়ি আর পাগড়ির মতোই তাঁর ‘ইমেজ’ ছিল দুধসাদা। সাদা পোশাক পরতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। এ দিনের স্মরণসভায় অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, “চাচা শ্রদ্ধেয়। উনি কখনও মনে করতেন না যে কোনও দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মনে করতেন, মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy