Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মায়ের ভাষা কুড়মালি বাঁচাতে লড়ছেন ওঁরা

মাতৃভাষার প্রসারে ওঁরা সদা তৎপর। ওঁদের কাছে বছরের প্রতিটা দিনই ভাষাদিবস। মাতৃভাষা কুড়মালিকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে তাঁদের কেউ খাবারের দোকান চালানোর ফাঁকেই সাহিত্য চর্চা করেন, আবার কেউ স্কুলে ছাত্র পড়ানোর মাঝেই তৈরি করেছেন কুড়মালি লিপি। সরকারি উদ্যোগের আশায় না থেকে বছর কয়েক ধরে এ ভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জয়ন্ত মাহাতো, মঙ্গল মাহাতো, নারায়ণ মাহাতোর মতো মানুষেরা।

চলছে ভাষা শেখানোর কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র।

চলছে ভাষা শেখানোর কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

মাতৃভাষার প্রসারে ওঁরা সদা তৎপর। ওঁদের কাছে বছরের প্রতিটা দিনই ভাষাদিবস। মাতৃভাষা কুড়মালিকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে তাঁদের কেউ খাবারের দোকান চালানোর ফাঁকেই সাহিত্য চর্চা করেন, আবার কেউ স্কুলে ছাত্র পড়ানোর মাঝেই তৈরি করেছেন কুড়মালি লিপি। সরকারি উদ্যোগের আশায় না থেকে বছর কয়েক ধরে এ ভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জয়ন্ত মাহাতো, মঙ্গল মাহাতো, নারায়ণ মাহাতোর মতো মানুষেরা।

কুড়মালি ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়, প্রায় দু’কোটি। এরমধ্যে রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ মানুষ কথা বলেন কুড়মালিতে। যদিও এ রাজ্যে কুড়মালিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। অথচ কুড়মালিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডে। সেখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে কুড়মালি ভাষায় পড়াশোনা করারও সুযোগ রয়েছে। অথচ রাজ্যে সরকারি ভাবে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা না থাকায় ক্রমে হারাতে বসেছে কুড়মালি ভাষা।

ভাষার বাঁধনকে অটুট রাখতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জয়ন্তবাবু, মঙ্গলবাবু, নারায়ণবাবুরা। কুড়মালি চিসই (কুড়মালি লিপি) তৈরি করেছেন ঝাড়গ্রামের মুড়াকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত মাহাতো। বছর পঞ্চান্নর মঙ্গলবাবু ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে নিজের খাবারের দোকান চালান। দোকানের কাজের ফাঁকেই কুড়মালি সাহিত্য চর্চা করেন তিনি। আর সমাজসেবী নারায়ণবাবু কুড়মালি ভাষায় একটি অভিধানই তৈরি করে ফেলেছেন।

জয়ন্তবাবুদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবী মানুষজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও মালদহ জেলার মোট ৫৪টি বেসরকারি অবৈতনিক স্কুলে প্রাথমিকস্তরে ‘কুড়মালি চিসই’ লিপিতে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠন চলছে। এখানেই থেমে নেই তাঁরা। ভাষাকে ভালবেসে জামবনির টুলিবড়, বালিডিহা, বেলপাহাড়ির জয়পুর, নয়াগ্রামের ধুমসাই-এর মতো প্রত্যন্ত সব গ্রামে ভাষা শেখানোর কর্মশালারও আয়োজন করা হচ্ছে।

যদিও কুড়মালি ভাষাকে বাঁচাতে সরকার উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। এ রাজ্যে সরকারিস্তরে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠন ও ভাষা স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবারের জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন জয়ন্তবাবুরা। তারপরেও সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি।

জয়ন্তবাবু, মঙ্গলবাবু, নারায়ণবাবুরা বলছেন, “ভাষার স্বীকৃতি ছাড়া কুড়মালি ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। তাই নিজেদের পেশার বাইরে সময় পেলেই আমরা মাতৃভাষা শেখাতে গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াই। ওই দিনগুলিই আমাদের কাছে মাতৃভাষা দিবস।” তাঁদের কথায়, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইনে বলা আছে, শিশুর শিক্ষার মাধ্যম হবে তার মাতৃভাষা। শিশুরা যাতে কোনও মতেই শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সে কথাও
আইনে বলা আছে। কুড়মালিভাষী শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষালাভে বঞ্চিত হচ্ছে।’’ জয়ন্তবাবুদের কথায়, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাতৃভাষায় শিক্ষিত করতে নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International mother language day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE