Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Religious Politics

জোড়া পুজোয় রাজনীতির টক্কর

বিশ্বকর্মার ঠিক পরের দিনই গণেশ চতুর্থী। বিজেপির কাঁথি সংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের পাশেই গণেশ পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।

An image of Gods

আর এ কদিন পরেই গণেশ চতুর্থী, শনিবার তমলুকের আস্তাড়ার পটুয়াপাড়ায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। বিশ্বকর্মা পুজোর প্রস্তুতি চলছে হলদিয়ায়। ছবি : পার্থপ্রতিম দাস এবং নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না ও সৌমেন মণ্ডল
কাঁথি ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৩
Share: Save:

একেবারে পিঠোপিঠি দুই পুজো। সোমবার যন্ত্রের দেবতা বিশ্বকর্মার আর মঙ্গলবার সিদ্ধিদাতা গণেশের। নিখাদ উৎসব উদযাপনের বদলে লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই জোড়া পুজোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনসংযোগের হাতিয়ার করতে কার্যত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী দলের।

জেলায় সবচেয়ে ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন হয় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে। তবে, কাঁথি থেকে তমলুক, কোলাঘাট থেকে এগরা, দিঘা থেকে পাঁশকুড়া - সর্বত্র অসংখ্য বিশ্বকর্মা পুজো হয় যার অধিকাংশই সরাসরি শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এ বারে অবশ্য বেশ কিছু বিশ্বকর্মা পুজোয় জড়িয়েছেন পদ্ম শিবিরের নেতা-বিধায়কেরাও।

কাঁথিতে তো বটেই, ভগবানপুর-২ ব্লকের মুগবেড়িয়াতে এ বার প্রথম বিশ্বকর্মা আরাধনার আয়োজন করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলছেন, "অনেকেই এলাকায় বিশ্বকর্মা পুজো চাইছিলেন। এ বার পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। পুজোর পাশাপাশি সামাজিক কর্মসূচিও রয়েছে।" কাঁথি এবং তমলুকের পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলির অধিকাংশই তৃণমূল দ্বারা পরিচালিত। ফলে সেখানে পুজোর রাশ শাসক দলের হাতে থাকছে।

হলদিয়ায় এ বার পুজো হচ্ছে প্রায় ১৫০টি। অনেক পুজোরই বাজেট পাঁচ লাখ অথবা পঁচিশ লাখ! শিল্প শহরের ৯৮ শতাংশ বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্বোধনে থাকছেন শাসকদলের নেতারাই। প্রান্তিক এলাকার গোটা চারেক পুজো, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানা ও ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ আয়োজিত একটি পুজো ছাড়া বাকি সব পুজোর উদ্বোধন নিজেদের হাতে রেখেছেন শাসকদলের নেতারা। এই তালিকায় আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি চন্দন দে, তৃণমূলের হলদিয়া শহর সভাপতি মিলন মণ্ডল- সহ একাধিক নেতা রয়েছেন।

বিজেপির তরফে পুজোয় বস্ত্র দান ও বই-পেন দান কর্মসূচি রাখা হয়েছে। তারাও এই ভাবে জনসংযোগ বাড়াতে চাইছে। হলদিয়ার বিধায়ক তথা বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপসী মণ্ডল বলেন, "শ্রমিকদের নির্লজ্জ দখলদারি করছে তৃণমূল। ইউনিয়নের দখল নিয়ে যাঁরা শ্রমিকদের কোনও উপকার করতে পারেনি উল্টে মালিকদের টাকায় নিজেদের পকেট ভরে শ্রমিকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে তারাই এখন শ্রমিকদের পুজোর দখল নিয়ে জনসংযোগ নাটক করছে।"

হলদিয়ার বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘একাধিক পুজোর উদ্যোক্তারা উদ্বোধক হিসেবে এলাকার বিধায়ককে চেয়েছিলেন কিন্তু শাসক দলের চাপে তা করতে পারেননি।" তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার আইনটিইসির সভাপতি চন্দন দে বলেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ নেই। পুজোর সঙ্গে জনসংযোগ করতেই হয়।’’

বিশ্বকর্মার ঠিক পরের দিনই গণেশ চতুর্থী। বিজেপির কাঁথি সংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের পাশেই গণেশ পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। স্থানীয় মহিলা গোষ্ঠী পরিচালিত এই পুজোর সঙ্গে বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকেন। তার ঠিক পাশেই গণেশ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর তরফ থেকে। রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি, এবং তাঁর ছেলে তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির অনুগামীরা এই পুজোর সঙ্গে রয়েছেন। পাশেই এ বার আলাদা করে পুজোর আয়োজন করেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিকের অনুগামীদের একাংশ।

তৃণমূলের কাঁথি সংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ মাইতি বলছেন, ‘‘আমরা সারা বছরই মানুষের পাশে থাকি। কিন্তু বিজেপি ভেদাভেদের রাজনীতি করে।" আবার বিজেপির কাঁথি সংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক অরূপ দাস বলছেন, "বিশ্বকর্মা কিংবা গণেশ পুজোয় প্রচুর সামাজিক কর্মসূচিতে দলের বিধায়ক এবং নেতাদের হাজির থাকার কথা।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE