Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Save Red Crabs

লাল কাঁকড়া রক্ষায় পোস্টার, সৈকতে দাপাদাপি রোখা!

দিঘায় সমুদ্রের ধারে কংক্রিটের গার্ডওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মন্দারমণিতে সৈকতের ধারে সারি সারি নির্মাণ।

এমন বিনোদনে বিপদ লাল কাঁকড়ার । মন্দারমণিতে।

এমন বিনোদনে বিপদ লাল কাঁকড়ার । মন্দারমণিতে। নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৮
Share: Save:

পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলকে কেউ বলেন, ক্ষয়িষ্ণু সৈকত। কারও মনে হয়, কংক্রিটের জঙ্গলে বাধা। দিগন্ত বিস্তৃত ঝাউবন, বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, বা লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি দিঘা-সহ জেলার উপকূল এলাকার পুরনো ছবি। বেলাভূমি আর ঝাউবন এখনও কোথাও কোথাও রয়েছে। তবে, অস্তিত্ব বিপন্ন লাল কাঁকড়ার। যাকে 'উপকূলের ইঞ্জিনিয়ার' বলে থাকেন কেউ কেউ।

পর্যটকদের একাংশের উন্মাদনা আর দেদার পিকনিকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে লাল কাঁকড়া। এ ছবি শুধু তাজপুর বা মন্দারমণি নয়, কাঁথির বগুড়ান জলপাই, বাঁকিপুট, ভোগপুরের সমুদ্র সৈকতেও। যদিও বিচ্ছিন্ন ভাবে কাঁথির কানাইচট্টা এবং মন্দারমণি সংলগ্ন পুরুষোত্তমপুরে চোখে পড়ে লাল কাঁকড়া। লাল কাঁকড়ার হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতেই প্রচারে নেমেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন দফতর। বাঁচানোর চেষ্টা আগেও হয়েছিল। প্রায় এক দশক আগে তাজপুর সৈকতে লাল কাঁকড়া বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছিল রামনগর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি। যদিও উদ্যোগের ব্যাপকতা সেরকম চোখে পড়েনি বলে স্থানীয়দের দাবি। তবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বগুড়ান জলপাই, বাঁকিপুট, মন্দারমণি, হরিপুর এলাকায় সচেতনতামূলক পোস্টার লাগিয়েছে বন দফতর।

দিঘায় সমুদ্রের ধারে কংক্রিটের গার্ডওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মন্দারমণিতে সৈকতের ধারে সারি সারি নির্মাণ। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের জেরে তাজপুরের সমুদ্র সৈকতের উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র প্রায় ভেঙে পড়েছে। পর্যটনের দাপটে সৈকতে অবাধ যান চলাচলে সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়েছে লাল কাঁকড়া। স্থানীয়দের দাবি, এক সময় মন্দারমণির মতো বগুড়ান জলপাইয়েও প্রচুর লাল কাঁকড়া দেখা যেত। কিন্তু বছর কয়েক ধরে দেখা মেলে না। বগুড়ান জলপাইয়ের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ভুঁইয়ার কথায়, "বড়দিন থেকে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। তাঁরা চুটিয়ে পিকনিক করেছেন। অনেকেই সৈকতে দাপিয়ে গাড়ি চেপে ঘুরেছেন।" পরিবেশ কর্মী শান্তনু চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘সৈকতে ভারী গাড়ি চলাচল করলে উপরের অংশের বালি বসে যায়। তলদেশ থেকে কাদামাটি বেরিয়ে পড়ে। এর ফলে ওই অংশে বসবাসকারী প্রাণী ও লতানো উদ্ভিদ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না।’’ বগুড়ান জলপাইয়ের সৈকতে ক্রিকেট খেলেন পর্যটক এবং স্থানীয়েরা। এটাও লাল কাঁকড়াদের বিরক্তির কারণ। তারা সরে গিয়েছে শৌলার দিকে।

পশ্চিমবঙ্গ জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ সমিতির কর্মকর্তা প্রীতিরঞ্জন মাইতি বলেন, “দিঘা শঙ্করপুরের সৈকতে লাল কাঁকড়ার অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি লাল কাঁকড়া দেখা যেত উদয়পুর-তাজপুর সৈকতেই। বছর কয়েক আগেও তাদের টানেই ভিড় করতেন পর্যটকেরা। এখন সেই আকর্ষণই হারিয়েছে।’’ আর এর জন্য ভুগছে সমুদ্র উপকূলের জীববৈচিত্রও। ইতিমধ্যেই একাধিক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ সৈকতের উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণু চেহারা ও লাল কাঁকড়ার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’’ জেলা বন আধিকারিক সত্যজিৎ রায় বলেন, "আগেও একাধিকবার সচেতনতামূলক প্রচার চলেছে। এবারও একই রকম ভাবে সমুদ্র সৈকত জুড়ে পর্যটকদের সচেতন করতে লাল কাঁকড়া সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার চলছে।" যদিও, পর্যটকদের একাংশ বিধি না মেনে সৈকতে অবাধে গাড়ি চেপে ঘুরছেন। আবার কোথাও নজরদারির জন্য সৈকত দিয়ে ছুটে চলেছে পুলিশের গাড়ি।

পরিবেশবিদ সুভাষচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলছেন, “তাজপুর-সহ সমুদ্র সৈকতের লাল কাঁকড়া শুধু সৈকতের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, একই সঙ্গে সমুদ্রের সঙ্গে উপকূলের প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। সমুদ্রের জোয়ার ভাটা, সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝার আগাম বার্তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mandarmani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE