Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দুর্নীতির দুর্বি-পাঁক
TET Scam

অপমানের দাগ একদিন মুছে যাবেই

ঘাটালের যোগদা সৎসঙ্গ হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক গৌরীশঙ্কর বাগের মত শিক্ষক নিয়ে দুর্নীতির এখনই সংশোধন হওয়া জরুরি।                  

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য , দিগন্ত মান্না
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৪১
Share: Save:

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির খবর নাড়িয়ে দিয়েছে প্রবীণ ও আদর্শ শিক্ষকদের হৃদয়কেও। কেউ বলছেন ‘শিক্ষাজগতের লজ্জা’, কারও যুক্তি ‘কিছু জনের জন্য হারাচ্ছে সম্মান’। যদিও আশা ছাড়তে নারাজ দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার অনেক শিক্ষকই।

২০১২ সালে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পাওয়া মেদিনীপুর গ্রামীণের শিরোমণি বিরসা মুণ্ডা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত নির্মলেন্দু দে বলছেন, ‘‘আগেকার দিনে শিক্ষকদের সম্মান ছিল। এখন আর সেই সম্মান কই? কিছু জনের জন্য সম্মান ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। যা দেখছি, সে সবে লজ্জা হয়।’’ গড়বেতার জাতীয় পুরস্কার ও শিক্ষারত্ন পাওয়া প্রাথমিক শিক্ষক মঙ্গলপ্রসাদ মাইতির কথাতেও খেদ। তিনি বলেন, ‘‘ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে আঁধার সরিয়ে আলো জ্বালতে।’’ ১৯৬১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করা বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমির প্রাক্তন শিক্ষক যুগজিৎ নন্দ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে যারপরনাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এগুলো শিক্ষা ও শিক্ষক জগতের লজ্জা। জাতির লজ্জা।’’ অনুরূপ মত পিংলার সাহরদা হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক 'শিক্ষারত্ন’ সম্মানে ভূষিত অজিত সামন্তেরও। নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে এই আদর্শ শিক্ষক বলেন, ‘‘কর্মজীবনের শেষ ভাগে একাংশ শিক্ষক দেখেছি, যাঁদের স্কুল ও পড়ুয়াদের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। এখন এসে বুঝছি এই পদ্ধতিতেই হয়তো তাঁরা শিক্ষক হয়েছিলেন।’’ ঘাটালের যোগদা সৎসঙ্গ হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক গৌরীশঙ্কর বাগের মত শিক্ষক নিয়ে দুর্নীতির এখনই সংশোধন হওয়া জরুরি।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা টানা এগারো বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের নিরিখে শীর্ষে। জেলার এই সাফল্যের জন্য শিক্ষক সমাজকে কৃতিত্ব দেন অভিভাবকেরা। জেলার প্রাক্তন শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির এই হইচই পড়ুয়াদের মনেও দাগ কাটছে। শ্যামসুন্দরপুর পাটনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী প্রধানশিক্ষক পুলিনবিহারী শাসমল বলছেন, ‘‘ভাল শিক্ষকেরা আছেন বলেই আজও আমাদের জেলা প্রথম স্থানে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে কিছু ঘটনা পড়ুয়াদের মধ্যে অশ্রদ্ধার ভাব তৈরি করছে। এর বিহিত শিক্ষকদেরই করতে হবে।’’

ঝাড়গ্রাম জেলার অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক বললেন, ‘‘শুনতে পাই শিক্ষকেরা স্টাফ রুমে গিয়ে গল্প করছে, কোথায় টাকা রাখলে টাকা বাড়বে, কবে ডিএ দেবে এসব কথা। তাঁদের কাছে পাঠদান গৌণ। এই সমস্ত শিক্ষকদের জন্য তো নিন্দা শুনতে হবেই।" ঝাড়গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক সুধাংশুশেখর মাহাতো বলেন, ‘‘ যাঁদের তিলমাত্র শিক্ষকতা করার কোনও ইচ্ছে নেই, তাঁদের অনেকেই শিক্ষকতায় আসছেন।’’ এই প্রবীণ শিক্ষকও আশাবাদী একদিন এই সমস্যা কেটে যাবে। আশার কথা শুনিয়ে অরণ্যশহরের প্রবীণ শিক্ষকেরা বলছেন, প্রকৃত শিক্ষকেরা আগেও সম্মান পেতেন, ভবিষ্যতেও পাবেন, সেখানে কেউ কোনও দাগ লাগাতে পারবে না। (শেষ)

(সহ প্রতিবেদন: বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বিশ্বসিন্ধু দে, রঞ্জন পাল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TET Scam Primary Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE