E-Paper

মাস্টার প্ল্যান এখনও ঠান্ডা ঘরেই

পঞ্চায়েত পেরিয়ে সামনে লোকসভা ভোট। অতীতেও বারবার ভোটের সময় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা উঠেছে। বাড়ি বাড়ি প্রচার, পথসভা থেকে কর্মিসভা, দেওয়াল লিখন - সবেতেই সব দল এর উল্লেখ করেছে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৯:১২
An image of Ghatal

প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ঘাটালের বন্যা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সঙ্গে দেব ও জুন মালিয়া। —ফাইল চিত্র।

‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’– বানভাসি ঘাটালকে বাঁচাতে এই প্রকল্প নিয়ে লক্ষ বার কথা হয়েছে। কিন্তু দশকের পর দশক ঘুরলেও কাজ হয়নি। ঘাটালবাসী এখন এই প্রকল্পের নাম শুনলে হয় খেপে যান, নাহলে হতাশ সুরে জানান, রাজনীতির জটেই কাজের কাজটা হল না।

পঞ্চায়েত পেরিয়ে সামনে লোকসভা ভোট। অতীতেও বারবার ভোটের সময় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা উঠেছে। বাড়ি বাড়ি প্রচার, পথসভা থেকে কর্মিসভা, দেওয়াল লিখন - সবেতেই সব দল এর উল্লেখ করেছে। আবার লোকসভার ভোটের আগে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে ওই প্রকল্প। তবে পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি ছাড়া অগ্রগতির কথা শোনা যাবে বলে মনে হয় না।

একটা প্রকল্প নিয়ে এত টানাহিঁচড়ায় ঘাটালবাসীও ক্লান্ত। কারণ, ফি বর্ষায় ডুবতে হয় তাঁদের।অথচ, সমস্যার স্থায়ী সমাধান এখনও অনেক দূর।

সেটা ছিল ১৯৮২ সাল। সেই সময় ঘাটালের শিলাবতী নদীর পাড়ে শিলান্যাস করে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সূচনা হয়েছিল। বরাদ্দ হয়েছিল টাকা। তারপর কাজ আর এগোয়নি। মাঝপথে কোনও এক অজানা কারনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রকল্প। তার পর কেটে গিয়েছে চল্লিশটা বছর। বন্যার দুর্গতিও মেটেনি, আর প্রকল্পও রূপায়িত হয়নি।

১৯৫৯ সাল থেকে মানসিংহের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তারপর ক্রমে ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছিল ফাইলপত্র। নতুন করে ফের ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থা মাস্টার প্ল্যানের জন্য ডিপিআর তৈরির কাজ শুরু করে। তাতে ১৭৪০ কোটি প্রকল্প ব্যয় ধার্য হয়।২০১৫ সালে জিএফসি (গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন) প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয়। একই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে ১২১৪ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা মঞ্জুরের সুপারিশ করে।

ওই বছরই কেন্দ্রের টেকিনিক্যাল কমিটির অনুমোদনও মিলেছিল। তারপর ফের ২০২২ সালে কেন্দ্র প্রকল্পটি ‘ফ্ল্যাড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বর্ডার এরিয়া’ প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয় রাজ্য সরকারকে। রাজ্য সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তারপর এই বছরই ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স’ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এখনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। এ নিয়েই চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

গত বছর ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে প্রকল্প কাযর্কর করতে তৎপরতার কথা শুনিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলের মধ্যে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রী, বিধায়কদের দিল্লিতে গিয়ে দরবার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সেই মতো রাজ্য সরকারের তরফে এক প্রতিনিধি দল দিল্লি গিয়েছিল। তাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা বরাদ্দের দাবিও জানিয়েছিলেন। তার জেরেই কেন্দ্র ওই ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। কেন্দ্র সরকার উদ্যোগী হয়েই ওই ছাড়পত্র দিয়েছে বলে পাল্টা দাবি গেরুয়া শিবিরের। তবে টাকা বরাদ্দ নিয়ে কোনও পক্ষই সদুত্তর দিতে পারেনি।

মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার দাবি, “মাস্টার প্ল্যান কাযর্কর করতে যতটুকু এগিয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করছে না।”

ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট পাল্টা বলছেন, “কেন্দ্র উদ্যোগী হয়েছে বলেই প্রকল্পটি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট আগ্রহী।”

ভুক্তভোগী ঘাটালবাসী অবশ্য এই আকচাআকচিতে ক্লান্ত। তাঁরা চান, রাজনীতি দূরে সরিয়ে কাজের কাজটা হোক। 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি'র পক্ষে নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, “রাজনৈতিক চাপান উতোর বন্ধ হোক।দ্রুত টাকা বরাদ্দ করতে দু’ক্ষই এগিয়ে আসুক, ঘাটালবাসী সেটাই চায়।” (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ghatal Master Plan Dev Mamata Banerjee June Malia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy