‘এ বার বাঁ হাতে’।
থিম পুজোর ক্যাচলাইন দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে, বাঁ হাতে কী! মনসামঙ্গলের আখ্যান অনুযায়ী, বাম হাতে চাঁদ সওদাগর মনসাকে অঞ্জলি দিয়েছিলেন। তার ফলে স্বর্গে আসনলাভ হয়েছিল সর্পদেবীর। তবে ‘গিধনি পূর্বাশা’র থিম পুজোয় চাঁদ সওদাগর, বেহুলা-লক্ষীন্দর কিংবা মনসা নেই। রয়েছে বিমূর্ত ভাবনায় সাপ নিয়ে কুসংস্কার ভাঙাতে সচেতনতার প্রচার।
শিল্পী তপন মাহালির তত্ত্বাবধানে এলাকার কিশোর-যুবক ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা দিন রাত এক করে মণ্ডপসজ্জার কাজ করেছেন। ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের সদর গিধনির এই পুজোতে কয়েক বছর ধরেই থিমের চমক সকলের নজর কাড়ছে। উদ্যোক্তারা স্রেফ লাল আর কালো রং ব্যবহার করে চোখ ধাঁধানো মণ্ডপ গড়েছেন।এ বার সাপ নিয়ে প্রচলিত নানা কুসংস্কার ও ভুল ধারণা ভাঙতে পুরো মণ্ডপটি প্রকৃতপক্ষে ইনস্টলেশন আর্ট-ওয়ার্ক। বাঁশ, কাঠ, কাপড় দিয়ে তৈরি মণ্ডপের অঙ্গসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে লাল ও কালো রঙের ফিতে, ফোম, স্পঞ্জ, কাগজ, পাটকাটি, ফয়েল, শোলা। মণ্ডপ চত্বরে থাকছে সাপ সংক্রান্ত নানা ধরনের চিত্র। মণ্ডপের সামনে এক নাগকন্যার মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। এমন সর্পমানবী যে বাস্তবে হয় না, সেটার ব্যাখ্যাও থাকছে।
সাপে কাটলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে মানুষ দৌড়ন ওঝা কিংবা জানগুরুর কাছে। এটা যে পুরোটাই লোকঠকানো ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই নয়, থিমে সেটাও দেখতে পাবেন দর্শকরা। কেন এমন থিম? উদ্যোক্তারা বলছেন, জঙ্গলমহলে প্রতি বছর সাপের ছোবলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময়মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে না যাওয়ার ফলে আক্রান্তকে বাঁচানো যায় না। সাপে ছোবল মারলে ভয় না পেয়ে আক্রান্তকে প্রাথমিক শুশ্রূষা করে দ্রুত নিকটবর্তী সরকারি স্বাস্থ্যকন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে থিমের মাধ্যমে। কোন সাপ কেমন দেখতে, কী তাদের চরিত্র এ সবই জানতে পারবেন উদ্যোক্তারা। সাপ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের জন্য স্বাস্থ্যদফতর ও প্রাণিবিদ্যার গবেষকদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। থাকছে সাপের প্রতিষেধক নিয়েও আলোচনা।
শিল্পী তপন মাহালি বলেন, “চাঁদ সওদাগর বাম হাতে পুজো করে মনসার স্বর্গের আসন সুনিশ্চিত করেছিলেন। আমরাও সাপ নিয়ে মানুষের মনের আঁধার দূর করে সচেতনতার প্রচারকে সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছি। পুজোর থিমের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতার বার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।”