বেআইন: কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলেছে ভুটভুটি। নিজস্ব চিত্র
লাইফ জ্যাকেট কোথায় দাদা?
উত্তর জানা নেই।
যাত্রীরা বলেন, দেখেননি কখনও। ফেরি সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলেন, অফিস ঘরে আছে, যাত্রীরা পরতে চান না।
দু’দলের দড়ি টানাটানিতে জ্যাকেট আপাতত গেছোদাদার গোত্রে পড়ছে। কখন কোথায়— কেউ জানে না!
সপ্তাহ খানেক আগে অবশ্য হঠাৎই বদলে গিয়েছিল ছবিটা। হলদিয়ার ফেরিঘাটগুলিতে দেখা যাচ্ছিল বয়া, লাইফ জ্যাকেট। যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে আগুন রঙা জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে পার হচ্ছিলেন নদী। ক’দিনেই সে সব ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। হলদিয়া ফিরে গিয়েছে পুরনো অবস্থায়।
সপ্তাহ খানেক আগে দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে হলদিয়া ঘুরে গিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার বেশ কয়েকটি ফেরিঘাটের পরিস্থিতি দেখে উন্নতির বিধান দিয়ে গিয়েছেন কর্তারা। তাতে বিশেষ টনক নড়েছে বলে মনে হয় না হলদিয়ার পরিবেশ দেখে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবহণ সচিব হলদিয়া–নন্দীগ্রাম ঘাটে আসতে পারেন তাই সতর্ক ছিল ঘাট পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি। সে দিন সকাল থেকেই ঘাটে মজুত করা হয়েছিল লাইফ জ্যাকেট-সহ নিরাপত্তার সরঞ্জাম। সরকারি পরিষেবার হাল ফিরেছে— ভেবেছিলেন নিত্যযাত্রীদের অনেকেই। কিন্তু তেমনটা যে নয়, বোঝা গিয়েছে ক’দিনের মধ্যেই।
রাজ্য পরিবহণ দফতর যেখানে ভুটভুটি সরিয়ে যে কোনও ফেরিঘাটে লঞ্চ চালানোর কথা ভাবছে, সেখানে হলদিয়ায় বহাল তবিয়তে চলছে ভুটভুটি। সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই তোলা হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। এমনকী দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও ভুটভুটিতে চলছে নদী পারাপার। নজরদারির বালাই নেই। হলদিয়া–নন্দীগ্রাম নিত্য ফেরি যাত্রী সমন্বয় কমিটির কনভেনর দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘পরিবহণ সচিব আসার পর দিন দিয়েক ঠিক ছিল। আবার একই কায়দায় ফেরি চলছে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে একটি লঞ্চ চালানো হচ্ছে মাঝেমধ্যে। বাকি ভুটভুটি দিয়েই চলছে পরিষেবা।’’
নিত্য যাত্রীদের অভিযোগ, প্রথম প্রথম লাইফ জ্যাকেট রাখা ছিল ফেরিঘাটে। এখন আর তার দেখা নেই। নন্দীগ্রামের বাসিন্দা আবু তালহার অভিযোগ, ‘‘নন্দীগ্রাম প্রান্তে কোনও দিন পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা যায় না। তবে নেতা–মন্ত্রীরা ফেরি পারাপার করলে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়।’’
হলদিয়ায় ফেরি সার্ভিসে সঙ্গে যুক্ত সংস্থার প্রধান রবি দাস অবশ্য আঙুল তুলেছেন যাত্রীদের দিকে। তাঁর দাবি, ‘‘যাত্রীরাই লাইফ জ্যাকেট পড়তে চান না আমরা কী করব? সবই রাখা রয়েছে লঞ্চে। অফিসের সময় যাত্রীরাই হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়েন। পুলিশ ছাড়া তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ’’
যদিও যাত্রীরা সে কথা মানতে নারাজ। নন্দীগ্রামে শিক্ষকতা করতে যাওয়া রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়ের কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ফেরি পেরিয়ে কাজে যাই। কোনও দিনই কোথাও লাইফ জ্যাকেট দেখতে পাইনি।’’
রবি দাস অবশ্য সব অভিযোগই উ়ড়িয়ে দিয়েছে যুক্তির জালে। তাঁর কথায়, ‘‘ফেরিঘাটের নানা সমস্যা ছিল। সেগুলি উন্নতি করা হয়েছে। ঘাটের দুই প্রান্তে আলো দেওয়া হয়েছে। নদীতে জল কম থাকলে লঞ্চ চলবে কী করে? ভুটভুটিই ভরসা।’’ তাঁর দাবি ভুটভুটি বন্ধ করে দিলে তাঁদের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হবে।
হলদিয়ার মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু নস্কর অবশ্য বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই ফেরি পরিষেবা দিতে হবে। কোনও ধরনের অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy