টনক নড়েনি মৃত্যুতেও। পুরীগেট উড়ালপুলের দুর্ঘটনাস্থল দিয়েই হেলমেট ছাড়া চলেছে মোটরবাইক আরোহী। নিজস্ব চিত্র।
রাতের শহরে বেপরোয়া বাইকের দাপাদাপি খড়্গপুরের চেনা ছবি। অল্পবয়সী ছেলেদের সেই মজা যে প্রাণঘাতী হতে পারে, তার সাক্ষী রইল শুক্রবারের রাত। সেই সঙ্গে বেআব্রু হল রাতের রেলশহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কতখানি পঙ্গু।
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ খড়্গপুর শহরের পুরীগেট উড়ালপুলের বাঁকে মোটরবাইক পিছলে মৃত্যু হয়েছে আরোহী দুই যুবকের। স্থানীয় সূত্রে খবর, ইন্দার বামুনপাড়ার অভিষেক দে (২১) ও খরিদার রজকপল্লির এস ঈশ্বর রাও (২৮) মোটরবাইকে প্রেমবাজারের দিক থেকে ঝাপেটাপুরের দিকে আসছিল। একটি বাঁক ঘুরে উড়ালপুল থেকে নামার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই দুই যুবকের মাথায় আঘাত ছিল। বেশ কিছুক্ষণ ধরে রক্তক্ষরণের জেরে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। বলাই বাহুল্য দু’জনের কারও হেলমেট ছিল না।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দ্রুত গতিতে থাকা মোটরবাইকটি বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছলে গিয়ে উড়ালপুলের গার্ডওয়ালে ধাক্কা মারে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওই দুই যুবক মদ্যপান করে ছিলেন। তাই মোটরবাইকের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। যদিও মৃতের পরিজনদের দাবি, এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে। তাঁরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে পুলিশে আবেদন করেছেন। তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জিমে নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন অভিষেক। ‘বডি বিল্ডিং’য়ে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। একই জিমের সদস্য না হলেও স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন ঈশ্বরও। সেই সুবাদে অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। দিন কয়েক আগে দামি মোটরবাইক কিনেছিলেন অভিষেক। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঈশ্বরকে নতুন বাইকে চাপিয়ে পাড়ায় রামনবমীর পুজোয় এসেছিলেন অভিষেক। সেখানে সন্ধেটা কাটানোর পরে রাত ন’টা নাগাদ বামুনপাড়া থেকে দু’জনে বেরিয়ে যান। তখনই প্রেমবাজারের দিকে অভিষেকেরা গিয়েছিলেন বলে পরিজনদের অনুমান। সেখান থেকে ফেরার পথেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু রাত হয়ে যায় প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, ঠিক কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট নয়। শনিবার সকালেও দুর্ঘটনাস্থলে রক্তের ছাপ দেখা গিয়েছে। উড়ালপুল থেকে হাসপাতালের দিকে নামার পথে বাঁ-দিকের গার্ডওয়ালের বেশ কিছুটা অংশে ভারী কিছুর ধাক্কা খাওয়ার দাগও দেখা গিয়েছে।
রাতের খড়্গপুরে অল্পবয়সী ছেলেদের মোটরবাইক দৌরাত্ম্য রীতিমতো সমস্যা। কমবয়সী বেশিরভাগ ছেলের হাতেই এখন আধুনিক মডেলের দামি মোটরবাইক। রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দ্রুত গতিতে শহরের বুকে চলে সেই সব বাইক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমবয়সী ছেলেরা মদ্যপান করে বাইক চালান বলে অভিযোগ। মালঞ্চ, ঝাপেটাপুর, খরিদা, ইন্দা, কৌশল্যা, পুরীগেট উড়ালপুল থেকে প্রেমবাজারের সড়ক এখন মসৃণ হয়েছে। তাতে দ্রুত গতিতে বাইক চালানোর প্রবণতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কড়া না হওয়ায় আকছার ঘটছে
ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
তবে অভিষেক ও ঈশ্বরের পরিবারের দাবি, এ ক্ষেত্রে পিছন থেকে কোনও বড় গাড়ি ধাক্কা মেরেছে। এমনকী তাঁদের খুন করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা অভিষেকের পরিবারের। তবে তাঁরা মদ্যপান করতেন না বলে জানা যায়নি। অভিষেকের বন্ধু কৃশানু ভট্টাচার্য যেমন বলেন, “অভিষেক রোজ মদ খেত, এমনটা নয়। তবে একদিন ফূর্তিতে খেলেও খেতে পারে। তবে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে বালি ছিল। যে কোনও বাইক ওখানে পিছলে যেতেই পারে।” আর ঈশ্বরের মেজদা এস রামা রাওয়ের বক্তব্য, “কমবয়সী ছেলে একটু-আধটু মদ হয়তো খেত। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওঁদের পিছন থেকে ধাক্কা মারা হয়েছে।”
এটা দুর্ঘটনা হোক বা অন্য কিছু, শহরবাসী কিন্তু আতঙ্কিত। ইন্দার বাসিন্দা রেলকর্মী বাবু মিত্র বলেন, “আমার ছেলে আমার সামনে হয়তো আস্তে বাইক চালায়। কিন্তু চোখের আড়ালে দ্রুত গতিতে চালায় বলেই শুনি। প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।” এই দুর্ঘটনার পরে পুলিশও কিছুটা ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডলের আশ্বাস, “আমরা এ বারে শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করব। বেপরোয়া বাইক চালকদের ধরপাকড় করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy