বাড়তি যাত্রী নিয়েই চলছে অটো। বাঁ দিকে, মেদিনীপুরে এবং ডান দিকে, খড়্গপুরের পথে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।
নির্দিষ্ট রুট রয়েছে। সর্বোচ্চ কতজন যাত্রী তোলা যাবে তাও নির্দিষ্ট রয়েছে। তবে সে সবের পরোয়া না করেই শহরের পথে চলছে অটো-রাজ।
মেদিনীপুর হোক বা খড়্গপুর, যে অটোর ১২টি স্টপে দাঁড়ানোর কথা, সেই অটো তার তিনগুন বেশি জায়গায় দাঁড়াচ্ছে। যাত্রীরা হাত দেখালেই দাঁড়িয়ে পড়ছে। ঝুঁকি নিয়ে ৪ জনের জায়গায় তোলা হচ্ছে ৮-১০ জন যাত্রী। পরিণাম যানজটে নাকাল শহরবাসী। টোটোর সঙ্গে হামেশাই ঠোকাঠুকি লাগছে অটোর। একাংশ অটো চালকের আবার লাইসেন্স নেই। ফলে, কার অটো কে চালাচ্ছেন, তা জানা নেই প্রশাসনেরও!
প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, এ বার অভিযান শুরু হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিবহণ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, “অটো চালানোর সময় নিয়ম ভাঙা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য নজরদারি চলেই। যে সব চালক নিয়ম ভাঙেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রুটে চেকিং চলে। এ বার নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। চালকদের কাছে লাইসেন্স রয়েছে কি না তা দেখা হবে।’’ বিশ্বজিৎবাবু আরও জানান, পারমিট দেওয়ার সময়ই জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই অটোতে বাড়তি যাত্রী তোলা যাবে না। রুট ভাঙা যাবে না।
মেদিনীপুর শহর এবং শহর লাগায়ো এলাকায় আগে থেকেই প্রায় ৩০০টি অটো চলত। বছর দেড়েক আগে নতুন করে আরও প্রায় ২০০টি অটো নামে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বছর দেড়েক আগে জেলায় প্রায় ৮২৫টি অটোর রুট পারমিট দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেদিনীপুরে (সদর) প্রায় ৫০০টি, ঘাটালে প্রায় ১০০টি, খড়্গপুরে প্রায় ১৮০টি এবং ঝাড়গ্রামে প্রায় ৪৫টি। নিয়ম ভাঙার ঘটনা কম-বেশি সব জায়গাতেই হয়। বিশেষ করে রাস্তা খারাপ থাকলে অটো যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়ে।
সমস্যা বেশি শহর এলাকায়। মেদিনীপুরের বাসিন্দা অভিজিৎ আঢ্য, পলাশ মিত্ররা বলেন, “মনে হয় সব দিক ভাল ভাবে খতিয়ে না দেখেই অটোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাই রোজ যানজট হচ্ছে। যেখানে-সেখানে অটো দাঁড়াচ্ছে। আগে বড় রাস্তায় অটো চলত। এখন অলিগলিতেও ঢুকে পড়ছে।’’ শহরবাসীর আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি চললে আগামী দিনে দুর্ভোগ বাড়বে। অটো চালকেরা অবশ্য দৌরাত্ম্যের কথা মানতে নারাজ। মেদিনীপুরের অটো চালক কাঞ্চন বেরা বলেন, ‘‘বেশিরভাগ অটোই নিয়ম মেনে, নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করে। এখন শহরে যানজট সমস্যা অটোর জন্য হচ্ছে না। টোটোর জন্য হচ্ছে। টোটোগুলি রুট না মেনেই চলাচল করছে।’’
টোটোর সংখ্যা বাড়ায় খড়্গপুরে অবশ্য অটোচালকদের জুলুম কমেছে। তবে বাড়তি যাত্রী পরিবহণ চলছেই। চালকের পাশের দু’দিকে দু’জনকে বসানো তো রেলশহরে নিয়ম হয়ে গিয়েছে। বাসস্ট্যান্ড থেকে মালঞ্চ, ওয়ালিপুর, সালুয়া, নিমপুরা— সব রুটেই যাত্রীদের অভিযোগ, দিনের ব্যস্ত সময়ে চালকেরা অটোতে ১২ জন পর্যন্ত যাত্রী তোলেন বেশি বলতে গেলে চোখরাঙানি সইতে হয়। এমনকী প্রেমবাজার রুটে সন্ধে নামলেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। প্রেমবাজারের বাসিন্দা নীলিমা তরফদার বলেন, “গোলবাজারে যেতে গেলে অটো একমাত্র ভরসা। সন্ধে হলেই চালকদের জুলুমবাজি শুরু হয়। গোলবাজার থেকে প্রেমবাজার ১০ টাকা ভাড়া, কিন্তু ২০ টাকা চায়। বাধ্য হয়ে সব সহ্য করতে হচ্ছে।”
অটো-দৌরাত্ম্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে হামেশাই। গত ২২ জুলাই নিয়ন্ত্রণহীন অটো উল্টে জখম হয়েছিলেন পাঁচ যাত্রী। ২০১৪সালের ৩১ জানুয়ারি খরিদায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় অটো উল্টে জখম হয়েছিলেন দুই মহিলা-সহ ৭জন যাত্রী। ২০১৩-র ১৮ অক্টোবর গোলবাজার সেতু দিয়ে বোগদার দিকে যাওয়ার পথে গোল্ডেনচকে যাত্রী বোঝাই অটো উল্টে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। ওই বছরই জুনে খড়্গপুরের পুরাতনবাজারের কাছে অটো উল্টে গুরুতর জখম হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্র সুভাষপল্লির বাসিন্দা সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, “টোটো চলাচল শুরু হওয়ায় আগের তুলনায় অটো চালকদের দৌরাত্ম্য কমেছে। তবে বাড়তি যাত্রী তোলা কমেনি। প্রশাসনিক নজরদারি প্রয়োজন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy