E-Paper

দুর্গতদের পরিষেবায় ভাবনাই নেই 

বন্যার কাজে অভিজ্ঞ প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশেরও মত, পুরসভা কিম্বা স্থানীয় প্রশাসন একটু তৎপর হলেই বন্যায় সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা যায়।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ০৯:৩২
প্রায় প্রতি বর্ষায় ডুবে যায় বাড়ির একতলা। তাই দোতলার ছাদে মজুত করে রাখা রয়েছে গবাদি পশুর আহার। ঘাটালের গঙ্গাপ্রসাদে।

প্রায় প্রতি বর্ষায় ডুবে যায় বাড়ির একতলা। তাই দোতলার ছাদে মজুত করে রাখা রয়েছে গবাদি পশুর আহার। ঘাটালের গঙ্গাপ্রসাদে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান না হয় বড়সড় প্রকল্প। তা রূপায়ণে নানা ঝক্কিও আছে। কিন্তু জলে ডুবলে ঘাটালবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে যে ন্যূনতম যে ব্যবস্থাটুকু করা যেত, তাতেও বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়নি পুরসভা থেকে প্রশাসনের। এ নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে দুর্গতদের।

বিদ্যুৎ হোক বা পানীয় জল, কিংবা নৌকা— বানভাসি ঘাটালে এত বছরেও কোনও কিছুর সুরাহা করা যায়নি। প্রযুক্তির রমরমার এই যুগেও বন্যা মানেই দিনের পর দিন ঘুটঘুটে অন্ধকার,তেষ্টার জলটুকু না পাওয়ার বিড়ম্বনা সইতে হয় বন্যাদুর্গতদের।

ঘাটালবাসীর বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে পুরসভা দায় এড়াতে পারে না। বন্যার সময় নিদেন পক্ষে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সমস্যা তো মেটাতে পারত পুরসভা। এখনও মোবাইলে চার্জ দিতেও গলা জল পেরিয়ে কেন ছুটতে হবে উঁচু এলাকায়? সদ্যোজাত থেকে অশীতিপরদের বন্যার সময় নৌকার অভাবে কেন দুর্ভোগে পড়তে হবে?

বন্যার কাজে অভিজ্ঞ প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশেরও মত, পুরসভা কিম্বা স্থানীয় প্রশাসন একটু তৎপর হলেই বন্যায় সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা যায়। পুরসভা ও বিদ্যুৎ দফতর যৌথ প্রকল্প নিতে পারত। বিদ্যুতের খুঁটি ও ট্রান্সফর্মারগুলি আরও উঁচুতে বসানো যেত।অ্যালুমিনিয়ামের তারের বদলে কেবল্‌ তারের ব্যবস্থা করা যেত। এতে বন্যার সময় দুর্ঘটনাও যেমন এড়ানো যেত, তেমনই বিদ্যুৎ পরিষেবাও সচল থাকত।

উদ্যোগ থাকলে মেটানো যেত পানীয় জলের সঙ্কটও। উঁচু জায়গা বেছে ছোট ছোট পাম্প বসানো যেত। সেখানে বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থাও করা যেত। তাহলে বন্যার সময় সেই পাম্প চালিয়ে পানীয় জল সরবরাহ করা যেত। পাম্প চালালেই বাসিন্দাদের অনেকে এসে জল সংগ্রহ করতেন। যাঁরা আসতে পারতেন না, সেখানে পুরসভা নৌকায় করে বাড়িতে জল পৌঁছে দিতে পারত। কিন্তু সে সব কোনও পরিকল্পনাই হয়নি। ফলে, বদলায়নি জল-যন্ত্রণার ছবিটা।

বন্যার সময় ঘাটালে ছোটখাটো নানা দুর্ঘটনাও ঘটে। তখন সময়ে চিকিৎসা শুরু করা যায় না। অথচ শহরের গ্রামীণ ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দাদের কথা ভেবে স্বাস্থ্য পরিষেবাও সচল রাখতে পারত প্রশাসন। বন্যা হলে পুরসভার হাসপাতাল জলে ডুবে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পরিষেবা। তখন ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালই ভরসা। কিন্তু জল পেরিয়ে রোগীরা যাবেন কী ভাবে? সেই সমস্যা মেটাতে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় পুর হাসপাতাল চালু রেখে অন্তত জরুরি পরিষেবা সচল রাখা যেত। সেখানে চিকিৎসক-নার্স থাকতেন। প্রয়োজনীয় সব ওষুধ মজুত থাকত। যন্ত্র চালিত নৌকার ব্যবস্থা রেখে প্রয়োজনে বাড়ি থেকে রোগীকে তুলে এনে পরিষেবা দেওয়া যেত। কিন্তু এতদিনে এটুকুও করা যায়নি। বরং পরিকল্পনার অভাবে কয়েক বছর আগে নীচু এলাকাতেই তৈরি হয়েছে পুর হাসপাতাল।

ঘাটাল শহরের কিসমত এলাকার বাসিন্দা গোপাল আদকের আক্ষেপ, “আজকের দিনেও খাস শহরে থেকে বন্যার সময় আলো-জলের জন্য হাহাকার করতে হয়, একথা কী ভাবা যায়!” ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরার যদিও দাবি, “বিদ্যুতের সমস্যা মেটাতে পৃথক সাবস্টেশন তৈরি হচ্ছে। বহু খুঁটিতে কেবল্‌ তারের সংযোগ হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে স্বাস্থ্য কর্মীরা সতর্ক থাকেন।’’ তাঁর আরও দাবি, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে একাধিক পরিকল্পনা হয়েছে।

কিন্তু তা দিনের আলো দেখবে কত দিনে? সে জবাব অবশ্য আজও অধরা। (শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ghatal Rupnarayan River

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy