এক সময় পাহাড় থেকে সমতলে নেমে এসেছিলেন। ইস্টার্ন ফ্রন্টেয়ার রাইফেল বা ইএফআর ক্যাম্পের পাশেই গড়ে তুলেছিলেন বসতি। রয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া গোর্খা শংসাপত্রও। অথচ অভিযোগ, চাকরিক্ষেত্রে সেই শংসাপত্রে মিলছে না সুবিধা। গোর্খা প্রমাণে চাওয়া হচ্ছে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-এর শংসাপত্র। দীর্ঘ কয়েক বছর এমনই সমস্যায় ভুগছেন খড়্গপুর গ্রামীণের সালুয়ার বাসিন্দা নেপালিরা। বর্তমানে সংখ্যাটা প্রায় ১৪ হাজার।
মঙ্গলবার মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে সালুয়ার বাসিন্দা নেপালিদের এমন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়। তিনি বলেন, “জিটিএ শংসাপত্র না থাকায় আমাদের এখানকার নেপালিরা বঞ্চিত হচ্ছে দিদি।”
এমন অভিযোগ শুনে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “দেখ আমি যেমন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় ব্রাহ্মণ। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে কিন্তু ওবিসি। এই বিষয়টি সিএস বলতে পারবেন।”
তার পরে মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে দাবি করেন, ‘দার্জিলিঙের জেলাশাসক ওই শংসাপত্র দেয়। এমন কথা শুনে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “আমি প্রথমবার এমনটা শুনছি। আমি দার্জিলিঙের জেলাশাসকের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে নেব।”
অবশ্য এর পরেও তাঁদের সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন সালুয়ার নেপালিরা। কারণ তাঁদের দাবি, জেলা প্রশাসনের থেকে যে শংসাপত্র তাঁরা পান তাতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের চাকরিতে সামান্য কিছু সুবিধা পাওয়া গেলেও কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে কোনও সুবিধা মিলছে না। বছর সাতাশের বেকার যুবক সালুয়ার নয়াবস্তির বাসিন্দা ভুবন রাই বলেন, “আমার কাছে জেলাশাসকের দেওয়া গোর্খা শংসাপত্র রয়েছে। কিন্তু তাতে তো কোনও সুবিধাই পাচ্ছি না। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে এই শংসাপত্র দেখালে মানতে চাইছে না। বলছে জিটিএ শংসাপত্র নিয়ে এসো। আমরা নেপালি গোর্খা। কিন্তু কীভাবে জিটিএ শংসাপত্র পাব!” বিধায়ক দীনেন বলেন, “আমাদের দাবি, জিটিএ-এর সমতুল শংসাপত্র এই সালুয়ার গোর্খাদের দিতে হবে।”
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশ মিলিটারি পুলিশের একটি অংশকে নিয়ে আসা হয় খড়্গপুরের হিজলি বা অধুনা
আইআইটি এলাকায়।
পরে ওই বাহিনী ‘ইএফআর’ নামে রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি পেয়ে ১৯৫২ সালে সালুয়ায় স্থানান্তরিত হয়ে যায়। এখন ইএফআর ক্যাম্পাস চত্বরের ৫টি সহায়ক বুথে ছাড়াও খড়্গপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির ভেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে মাধবপুর, নয়াবস্তি, পুরানো বস্তি, কাঁতরা, পোড়াপাড়া-সহ ৪টি বুথে নেপালি জনজাতির বসবাস রয়েছে। সালুয়ার নেপালি নেতা তথা ভেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য রোশন ঘিষিং বলেন, “গোর্খা হিসাবে জেলাশাসকের শংসাপত্রে চাকরিক্ষেত্রে সুবিধা মিলছে না। তার উপরে ইএফআর নিয়োগ বন্ধ থাকায় আমাদের ছেলেরা হতাশ।”
অবশ্য এ দিন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “বিধায়ক দীনেন রায় বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন। আমি বিধায়কের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে নেব। তার পরে সংশ্লিষ্ট দফতরে আলোচনা করে যা করণীয় সেটা করব।”