কেলেঘাই নদীতে বসানো সেচ দফতরের রিভার পাম্প। —নিজস্ব চিত্র।
বোরো চাষে জলের জোগান দিত কেলেঘাই নদীর জল। সেচ দফতরের পর্যবেক্ষণে রিভার পাম্প বসিয়ে বোরো চাষে সেচের জল দেওয়া হত। কিন্তু গত কয়েক বছর বোরো মরসুমে নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় ওই রিভার পাম্প থেকে সেচের জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ। এই অবস্থায় বোরো চাষ বাঁচাতে বিকল্প হিসাবে জলের জন্য চাষিরা নিজেদের টাকায় মাঠে বিদ্যুৎ চালত গভীর সেচপাম্প বসিয়েছেন ।
পটাশপুর-১ ব্লকের কেলেঘাই নদীর ধার বরাবর গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং গোকুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম। নদীর জলেই মূলত ওই সব এলাকার চাষ নির্ভর করে। নদীর জলকে চাষের কাছে ব্যবহারের জন্য সেচ দফতরের পক্ষ থেকে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসানো হয় রিভার পাম্প। বোরো মরসুমের প্রথম দিকে রিভার পাম্পের সাহায্যে নদীর জল তুলে চাষের কাজে লাগানো গেলেও ধানে পাক ধরার মুহূর্তে সেচের সমস্য়ায় পড়তেন চাষিরা। কারণ, নদীতে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য রিভার পাম্পের সাহায্যে আর জল পাওয়া যেত না। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হত বোরো চাষিদের। বাধ্য হয়ে জলের জোগান পেতে কাছাকাছি পুকুর বা জলাশয়ের খোঁজে নামতে হত চাষিদের। কিন্তু বেশিভাগ ক্ষেত্রে সেখানেও ঠিকমত জল মিলত না বলে অভিযোগ। আয়ম্যাবড়বড়িয়া, গোকুলপুর, কুঞ্জবেড়িয়া, গোপালপুর-সহ একাধিক মৌজায় দেখা যেত একই ছবি। আগে এই সব এলাকায় ২০ থেকে ২৫ একর জমিতে বোরো চাষ হত। কিন্তু উন্নত ফলনশীল বীজ প্রযুক্তির শ্রীবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে প্রায় ১০০ একর জমিতে চাষ হয়। জানুয়ারি মাসে বোরো চাষের প্রথম দিকে সেচ দফতরের পাম্পের জলে রোপণ হলেও শেষের দিকে জলের জোগানের জন্য চাষিরা নিজেদের খরচেই গভীর সেচ পাম্প বসিয়ে নিয়েছেন।
চাষিদের বক্তব্য, ‘‘সেচের জন্য একর প্রতি সেচ দফতরকে ৮১৬ টাকা দিতে হয়। অথচ সময়ে জল মেলে না। তাই নিজেরাই এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হই।’’ কুঞ্জবেড়িয়া মৌজায় বিদ্যুৎ দফতরের অনুমতি নিয়ে তিনটি গভীর সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। তবে সরকারি ভাবে গভীর সেচ পাম্প বসানো হলে জলের এবং গভীর সেচ পাম্পের ভাড়া মিলিয়ে একত্রে প্রতি একরে ২২০০ টাকা মেটাতে হত। এখন নিজেরা পাম্প বসানোয় সেই খরচ অনেক কমবে বলে চাষিদের মত। কেবল বিদ্যুতে খরচ লাগবে। কুঞ্জবেড়িয়া গ্রামের দুই চাষি সাধন ঘাঁটা এবং নিমাই রায় বলেন, ‘‘নদীতে জলের সমস্যা থাকায় চাষ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে সবাই চাঁদা তুলে মাঠে গভীর সেচ পাম্প বসিয়েছি।
গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান প্রভুরাম দাস বলেন, ‘‘নদীতে সারা বছর জল না থাকায় সেচ দফতরের পাম্প চালানো যায় না। চাষের জন্য কুঞ্জবেড়িয়া এলাকার চাষিরা অস্থায়ী ভাবে বিদ্যুৎ দফতরের অনুমতি নিয়ে গভীর সেচ পাম্প বসিয়ে বোরো চাষে জলের জোগান দেয়। তবে এবিষয়ে সেচ দফতরকে জানানো হয়নি।’’
কাঁথি জলসম্পদ অনুসন্ধান উন্নয়ন দফতরের অফিসার বিভাস জানা বলেন, ‘‘নদীতে জল শুকিয়ে গিয়ে চাষে সেচের সমস্যা হচ্ছে এমন বিষয় জানা নেই। এ ধরনের কোনও অভিযোগ আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। যদি চাষিরা এমন অভিযোগ জানান, তবে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy