হলদিয়া শহরে অটোয় এই দৃশ্য প্রতিদিনের। নিজস্ব চিত্র
শিল্পশহরের আনাচে কানাচে পরিবহণে অটোর উপরে শহরবাসী নির্ভর করলেও অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে বার বারই অভিযোগ উঠেছে। কখনও বেশি ভাড়া, কখনও অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া থকে বেপরোয়া গতি—নানা অভিযোগে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে হলদিয়া শহরের ক্ষুদিরাম নগরের কাছে অটো উল্টে এক মহিলার মৃত্যুতে এ বার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। প্রশ্ন উঠেছে মহকুমায় অটো নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নটা নাগাদ ক্ষুদিরাম নগরে রাস্তার উপর ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় একটি অটো। অটোয় ছিলেন অশোক খোড়া ও তাঁর স্ত্রী কনক খোড়া। দু’জন আটকে পড়লে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। কনকদেবী (৩৮) গুরুতর জখম হন। তাঁর কান ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান। কনকদেবী ক্ষুদিরাম নগরেই ভাড়া থাকতেন। অশোকবাবু রাজ্য পুলিশের কর্মী।
পুলিশের দাবি, ক্ষুদিরাম নগরে ঢোকার মুখে ডিভাইডারের একটি অংশে কাট রয়েছে। সেখানে একটি মেয়ে মোবাইল কানে নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে অটোচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারলে অটোটি উল্টে যায়। যদিও পুলিশের দাবি মানতে নারাজ এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, একে তো নিয়ম ভেঙে বেশি যাত্রী নেয় অটোগুলি। তার উপর প্রচণ্ড গতিতে যাওয়ার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। ক্ষুদিরাম নগরেরই বাসিন্দা বাপি ঘোষ বলেন, ‘‘কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। দেখি একটি অটো দ্রুত ছুটছে। সম্ভবত চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পরাতেই ডিভাইডারে ধাকা লাগে।’’
শুধু বাপিবাবু নন, বেশি যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া ভাবে অটো চালানো নিয়ে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদেরও। এমনকী সন্ধ্যের পর অনেক অটোচালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালান বলেও অভিযোগ অনেকের। যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই গোলমাল বাধে বলে যাত্রীদের একাংশ জানিয়েছেন। শিল্পশহরে বিশেষ করে পুর এলাকায় অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। সিটি সেন্টার থেকে পুরসভা কিংবা হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দফতর মাত্র এক কিলোমিটার। এই দূরত্ব যেতে ভাড়া নেওয়া হয় আট টাকা। বেশি ভাড়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিটি সেন্টার থেকে দুর্গাচক এবং সেখান থেকে টাউনশিপের নানা এলাকায় অটোর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিন্তু অটো নিয়ন্ত্রণে কোনও সংগঠন কিংবা পুরসভার ভুমিকা চোখে পড়ে না। নিষ্ক্রিয় পুলিশও। ফলে অটোচালকেরা এতটা বেপরোয়া।
কেবল বাসিন্দারাই নন, অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পথ নিরাপত্তা কমিটিও (রোড সেফটি কমিটি)। কমিটির সদস্য তথা জেলা আইএনটিটিইউসি-র কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বলেন, ‘‘মহকুমায় পরিবহণে অটোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যের যে বার বার বলা সত্ত্বেও অটো মালিকদের কোনও সংগঠন নেই। যে কারণে এ ধরনের বেনিয়ম বেড়েই চলেছে।’’
যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে অটোর উপর নিয়ন্ত্রণ যে জরুরি তা জানিয়েছেন হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অটো মালিক ও চালকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে স্থানীয় থানাগুলি। প্রাথমিকভাবে বেনিয়মের অভিযোগ না থাকলেও অটোচালকদের সতর্ক করা হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অটোয় চালক-সহ পাঁচজন থাকার কথা। সেই সঙ্গে অটোর গতিও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই বিধি যে আদৌ মানা হচ্ছে না তা মেনে নিয়েছেন খোদ পুরকর্তারা। হলদিয়ার পুর পারিষদ আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘অটো নিয়ে সম্প্রতি নানা অভিযোগ কানে এসেছে। অটো মালিকদের শীঘ্র ডেকে পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy