E-Paper

পরিযায়ীদের ভোটে ঘাটতি, মানছে তৃণমূল

লোকসভা ভোটে ঘাটাল কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে দাসপুরে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল। চুয়াত্তর শতাংশ। অন্য বিধানসভাগুলির তুলনায় শতাংশের নিরিখে দাসপুর অনেক পিছিয়ে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ০৯:১৫
সোনার হাবের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন । দাসপুরের ফরিদপুরে।

সোনার হাবের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন । দাসপুরের ফরিদপুরে। নিজস্ব চিত্র।

পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে দাসপুরে সোনার হাব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তার পরেও লোকসভা ভোটে সেই পরিযায়ীদের ভোট শাসক তৃণমূলের বিপক্ষে গিয়েছে বলে মানছে শাসক তৃণমূল।

এ বার লোকসভা ভোটে দাসপুর বিধানসভায় লিড পেলেও ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটের চেয়ে এখানে অনেক পিছিয়ে তারা। তার অন্তর্দন্তে নেমেই পরিযায়ীদের মন না পাওয়ার তথ্য জানতে পেরেছে তৃণমূলের। এরপরই তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন, তবে কি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত ‘সোনার হাব প্রকল্পের’ সুফলের কথা প্রচারে ব্যর্থ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তা না হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ মুখ ঘোরালেন কেন? তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত মানছেন, “এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ ভোট দেননি। তবে তারা দলের বিপক্ষে নয়। বিধানসভা ভোটে তারা আমাদের পাশে ছিল। সংশ্লিষ্ট রাজ্যে পেশাগত সমস্যায় তাদের কেউ কেউ মুখ ফেরাতে বাধ্য হয়েছে।”

এ বার লোকসভা ভোটে ঘাটাল কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে দাসপুরে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল। চুয়াত্তর শতাংশ। অন্য বিধানসভাগুলির তুলনায় শতাংশের নিরিখে দাসপুর অনেক পিছিয়ে। এ বার লোকসভা ভোটে সেই দাসপুর বিধানসভায় ১৭ হাজার লিড পেয়েছে তৃণমূল।অন্যদিকে গত বিধানসভা ভোটে অবশ্য দাসপুরে সাড়ে ছাব্বিশ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে দু’বছরের মাথায় লিড কমল কেন, তার কারণ জানতে দলীয় ভাবে তদন্ত করছে তৃণমূল। সেখানে কোথায় কী সমস্যা তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। একই রকম ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিমুখ হওয়ার কথাও উঠে এসেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তথ্য বলছে, দাসপুর ২ ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা দাসপুর-১ ব্লকের তুলনায় বেশি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে দাসপুরে ২ ব্লকে তৃণমূলের লিড ছিল ১৬ হাজার। এ বার সেখানে ১০ হাজারের কিছু বেশি। গত বিধানসভায় দাসপুরে ১ ব্লকে লিড ছিল ১০ হাজারের উপরে। এ বার সেখানে ছয় হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ লিড ধরে রাখলেও ভোট কমেছে।

বরাবরই এই দাসপুর বিধানসভায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভোটের নির্ণায়ক ভূমিকায় থাকেন। এখানে মোট ভোটারের কমবেশি কুড়ি থেকে বাইশ শতাংশ পরিযায়ী। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ভোট যে কোনও প্রার্থীর হারজিৎ এ ভাল প্রভাব পড়ে। যে কোনও নিবার্চনের আগে তাই তাদের ঘরে ফেরাতে সক্রিয় হয় সবক’টি রাজনৈতিক দল। এ বারও তার চেষ্টা চালিয়েছিল তৃণমূল, বিজেপি -সহ সবপক্ষ। দিনের শেষে পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ ভোট দিতে এসেছিলেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূলে ভোট দিলেও একটা বড় অংশ শাসক দলের বিপক্ষে ছিল বলে শাসক দল সূত্রের খবর।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, দাসপুরে একটা বড় অংশের যুবক কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। নিজের এলাকায় কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়েই ভিন্ রাজ্যে যান বলে ক্ষোভ ছিল সবর্স্তরে। পরিযায়ী শ্রমিকদের মন পেতে বছর চারেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাসপুরে সোনার হাব চালু করার কথা ঘোষণা করার পরই সেখানে দ্রুত গতিতে হাবের পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যেটি চালু হলে নাকি স্বর্ণ শিল্পী ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সুবিধা হবে। এতকিছুর পরেও পরিযায়ীরা বিমুখ কেন? তবে কি লাভের বিষয়টি বোঝানোর ক্ষেত্রে কোথাও ঘাটতি আছে। নাকি হাবের পরিকল্পনা নিয়েই ক্ষোভ?

দাসপুরে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা দাসপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার পাত্র বলেন, “লোকসভা ভোট এবং বিধানসভার ভোটের প্রেক্ষিত পুরোপুরি আলাদা। তবে পরিযায়ীদের অনেকেই ভোট দিয়েছেন। অনেকেই দেননি।”

বিজেপি নেতা তপন দত্ত বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে দাসপুরে বিজেপির ভোট বেড়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা বিজেপি শাসিত রাজ্যে ভাল রয়েছেন। তাই এ রাজ্যেও তাঁরা আমাদের সমর্থন করছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ghatal Lok Sabha Election 2024 migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy