হিন্দুত্ব প্রচারে একদা মাওবাদী ধাত্রীভূমিতে কৌশল বদল করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। ঝাড়গ্রাম জেলার জনজাতি ও কুড়মি প্রধান এলাকা লালগড়। সেখানে হিন্দু জাগরণের কর্মসূচিতে কোনও গেরুয়া পতাকা থাকবে না বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেবল জাতীয় পতাকা নিয়ে হবে কর্মসূচি। একই সঙ্গে সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা মনে করাচ্ছেন, জাতীয় পতাকাতেও একেবারে উপরেই রয়েছে গেরুয়া।
কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলা ও মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে ঝাড়গ্রাম জেলাতেও হিন্দুদের সংগঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছে সঙ্ঘ। তবে সরাসরি সঙ্ঘের কর্মসূচি হচ্ছে না। সঙ্ঘের অভিভাবকত্বে হিন্দুত্ববাদীদের নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি বিধানসভা এলাকায় গড়া হয়েছে ‘জঙ্গলমহল হিন্দু সুরক্ষা বাহিনী’। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম বিধানসভার বিনপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা শহরে সেই বাহিনীর উদ্যোগে মশাল, রাম ও হনুমানের ছবি চিত্রিত গেরুয়া পতাকা নিয়ে ‘হিন্দু শৌর্য পদযাত্রা’ হয়েছে। হিন্দু জাগরণের এই কর্মসূচিতে মূলত সঙ্ঘের শাখা সংগঠনের কর্মীরাই পুরোভাগে থাকছেন।
চলতি বছর সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ। এই উপলক্ষে জনজাতি-কুড়মি প্রধান জঙ্গলমহলে হিন্দু জাগরণের বিস্তৃত ক্ষেত্র তৈরির উদ্যোগ হচ্ছে। তবে তাড়াহুড়ো নয়। কাজ চলছে ধীরগতিতে। সাবেক ঝাড়গ্রাম মহকুমায় সঙ্ঘের কাজকর্ম শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। গত আড়াই দশকে সঙ্ঘের ১২টি শাখা সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী প্রচার করে চলেছে।সেই দিক থেকে লালগড়ে গেরুয়া পতাকা ছাড়াই কর্মসূচির সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ, মানছেন সঙ্ঘের একাংশ।
বাম আমলে লালগড় ছিল সিপিএমের ঘাঁটি। ২০০৮-১১ অশান্তি-পর্বে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল লালগড়। জনজাতি ও মূলবাসীদের সামনে রেখে জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের পিছনে ছিল মাওবাদীরা। ফলে, সেখানে হিন্দু জাগরণের কর্মসূচিতে কৌশল বদল করতে হচ্ছে। সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা বলছেন, ‘‘লালগড়ে হিন্দু জাগরণের কর্মসূচি সফল করতে স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী ও শাখা সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গেআলোচনা চলছে। অতীত স্মরণে রেখে সেখানে কেবল জাতীয় পতাকা নিয়ে হিন্দু জাগরণের কর্মসূচি হবে। কেবল লালগড়ের জন্য এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে।’’
সঙ্ঘের মেদিনীপুর বিভাগের সম্পর্ক প্রমুখ উত্তম বেজও বলছেন, ‘‘যেখানে কাঁধ শক্ত, সেখানে গেরুয়া পতাকা নিয়ে কর্মসূচি হচ্ছে। যেখানে কাঁধ অধিকতর শক্ত করা প্রয়োজন, সেখানে জাতীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচি হবে।’’ জঙ্গলমহল হিন্দু সুরক্ষা বাহিনীর অন্যতম আহ্বায়ক বাপ্পা বসাকও মানছেন, ‘‘লালগড়ের অতীত মাথায় রেখে জাতীয়তাবাদে স্থানীয়দের এক জোট করার লক্ষ্যে সেখানে জাতীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচি হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)