E-Paper

গান্ধী হত্যায় সঙ্ঘ! বিতর্কেও অনড় পুরসভা

গান্ধীঘাটে পুরসভার তরফে দেওয়া বোর্ডের একদিকে রয়েছে গান্ধীজির ছবি, আরেকদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ০৯:০০
পুরসভার এই বোর্ড ঘিরেই বিতর্ক।

পুরসভার এই বোর্ড ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

কংসাবতী নদীর গান্ধীঘাট। শহর মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় নদীঘাট। সৌন্দর্যায়নের পরে এখানে একটি বোর্ড বসিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। সেই বোর্ডে গান্ধী- হত্যায় সরাসরি দায়ী করা হয়েছে আরএসএস-কে (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ)। ক্ষুব্ধ আরএসএস পুরসভার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিজেপি আবার নালিশ ঠুকেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে। পুরসভার দাবি, ওই বোর্ডে বিতর্কিত কিছু নেই!

গান্ধীঘাটে পুরসভার তরফে দেওয়া বোর্ডের একদিকে রয়েছে গান্ধীজির ছবি, আরেকদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। বোর্ডে লেখা, ‘১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজিকে গুলি করে হত্যা করেছিল এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী (আরএসএস) সংগঠন। মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হয় ‘হে রাম’। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর চিতাভস্ম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিসর্জন দেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি স্থান ছিল মেদিনীপুর শহরের কংসাবতী নদীর তীর। সেই স্মৃতিবহ স্থানটি আজ গান্ধীঘাট নামে পরিচিত’। বোর্ডে আরও লেখা, ‘এই পবিত্র ঘাটটি শুধু ইতিহাসের অংশ নয়। আমাদের জাতীয় চেতনারও প্রতীক। তাই এই স্থানটি পরিচ্ছন্ন ও সুরক্ষিত রাখা আমাদের সকল নাগরিকের দায়িত্ব...।’ নীচে লেখা, ‘পুরপ্রধান সৌমেন খান, মেদিনীপুর পুরসভা।’ প্রসঙ্গত, নদীর ঘাট নতুন করে বাঁধানো-সহ এই এলাকার নানা সৌন্দর্যায়ন করেছে পুরসভা। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তর্পণ’।

আরএসএসের দাবি, ইতিহাস বিকৃত করছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। আরএসএসের মেদিনীপুরের অন্যতম কার্যকর্তা সমীরণ গোস্বামী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অবিলম্বে ওই ‘ভুল’ সংশোধন না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমীরণ বলেন, ‘‘নদীঘাটে পুরপ্রধান যে বোর্ড বসিয়েছেন, সেখানে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। আমরা ওঁর সঙ্গে কথা বলে ভুল সংশোধনের আবেদন জানাব। আইনি পথে এগোনোর ভাবনাচিন্তাও করছি।’’ ইমেলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নালিশ ঠুকেছেন জেলা বিজেপির সহ সভাপতি শঙ্কর গুছাইত। শঙ্কর বলেন, ‘‘এ আপত্তিকর কথা। আমাদের ভাবাবেগে আঘাত। পুরপ্রধানের উচিত, দ্রুত ভুল সংশোধন করে দেওয়া।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসেরও দাবি, ‘‘পুরপ্রধানের ওই কথা প্ররোচনামূলক। ঘৃণা ভাষণের মতো!’’ পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘বোর্ডে ভুল কিছু লেখা নেই। আরএসএসের লোকেরাই তো গান্ধীজিকে হত্যা করেছে।’’ তৃণমূলের এক পুর প্রতিনিধির কথায়, ‘‘আরএসএস প্রথমবার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি, মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পরে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অনেক নেতাকে কারারুদ্ধ করেছিলেন সে সময়ে। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পরামর্শ উপেক্ষা করেই ১৯৪৯- এর জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিলেন বল্লভভাই।’’ শাসক দলের ওই পুর প্রতিনিধি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের চিঠির জবাবে বল্লভভাই লিখেছিলেন, ‘আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, হিন্দু মহাসভার একটি কট্টরপন্থী অংশ ষড়যন্ত্রে (গান্ধী হত্যা) জড়িত। আরএসএস সরকার এবং দেশের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক।’ বোর্ডে ঠিকঠাকই লেখা রয়েছে!’’

সমীরণের মন্তব্য, ‘‘আমরা দেখা করতে গেলে ওঁকে (পুরপ্রধান) বইপত্র দিয়ে আসব। ভাল করে পড়তে বলব! ইতিহাস জানলে এ ভাবে আরএসএসের সম্মানহানি হয়তো উনি করতেন না!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RSS TMC mahatma gandhi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy