বড়দিন এ ভাবেই কেটেছে রূপনারায়ণের মাঝিদের। নিজস্ব চিত্র
ভরদুপুরে নৌকার গলুইয়ের উপরে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন উত্তম মল্ল। রূপনারায়ণে মাছ ধরে পরিবারের সবার ভাতের জোগাড় করতে হয় তাঁকে। কিন্তু শীতের মরশুমে সেই মাছও এক এক সময় জালে উঠতে চায় না। তার অভাব অনেকটাই মিটে যেত এই ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে। উত্তমের মতো আরও অনেকের নৌকা ভরে উঠত কোলাঘাটে পিকনিক করতে আসা লোকজনে। পড়ন্ত বিকেলে রূপনারায়ণে নৌকাহবিহারের আকষর্ণই ছিল অন্যরকম। আর তার ফলে এই দুটো মাস মাছ তেমন না পেলেও সংসার চালানোর খরচের পাশাপাশি বাড়তি দুটো পয়সা রোজগার হত উত্তমের মতো অনেকের।
বছর আটেক আগেও বড়দিন মানেই ছিল জমজমাট কোলাঘাট। দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতার পর্যটকদের টেনে আনত এখানকার প্রকৃতি। অনেক পর্যটকের কাছে রূপনারায়ণে নৌকো বিহার ছিল বাড়তি পাওনা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কোলাঘাট এলাকার দেনান, সাহাপুর ও কোলা এই তিনটি গ্রামের প্রায় দেড়শো মৎস্যজীবী বহু বছর ধরে রূপনারায়ণে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখনও উত্তম মল্ল, দীপু বারিকরা ভুলতে পারেন না ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারির সেই দুর্ঘটনা। কেননা তার পর থেকেই বদলে গিয়েছে তাঁদের জীবনযাত্রা। রূপনারায়ণে নৌকাবিহারে বেরিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন কলকাতার ১৯ জন পর্যটক। ঘটনার পর তৎকালীন বাম সরকার রূপনারায়ণে নৌকাবিহার নিষিদ্ধ করে দেয়। আজও রূপনারায়ণে বন্ধ পর্যটকদের নৌকাবিহার। আর তার ফলে রুজিতে টান পড়েছে মৎস্যজীবীদের। কারণ এই সময় পর্যটকদের নৌকাবিহার করিয়ে হাতে ভাল টাকা আসত তাঁদের। উত্তমের মতো অনেকেই ভেবেছিলেন, ধীরে ধীরে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা না হওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, প্রশাসন উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ফের নৌকাবিহার চালু করুক রূপনারায়ণে। এতে বাঁচবেন তাঁরা। তাঁদের আরও দাবি, বিভিন্ন নদীর ফেরিঘাটে পারাপারে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট-সহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এখানেও সে সব নেওয়া যেত। তাঁরা চান, সরকার নির্দিষ্ট গাইড লাইন বেঁধে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিক নৌকোবিহারের। এই নিয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসে কোলাঘাট এলাকার মৎস্যজীবীরা জেলাশাসক এবং বিডিওকে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু অভিযোগ, আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।
কোলা গ্রামের মৎস্যজীবী দীপু বারিক বলেন, ‘‘প্রত্যেকদিন সড়কে কত দুর্ঘটনা ঘটে। তা বলে কি সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে?’’ সাহাপুর গ্রামের মৎস্যজীবী উত্তম মল্লর কথায়, ‘‘মাছ ধরে এখন সংসার চালানো দায়। সরকার নৌকাবিহারের অনুমতি দিলে আমরা বেঁচে যাই। না হলে না খেয়ে মরতে হবে। নৌকাবিহার চালু করার ক্ষেত্রে আমরা সরকারের সব শর্ত মানতে রাজি।’’
উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর থেকে অফিসের পিকনিকে কোলাঘাটে এসেছিলেন সহদেব নস্কর। তাঁর কথায়, ‘‘আগেও বড়দিনে কোলাঘাট এসেছি। নৌকাতেও চড়তাম। এখন শুধু পাড়ে বসে ভাল লাগছে না। স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা, বিধি চালু করে ফের নৌকাবিহারের অনুমতি দিলে পর্যটকরা আরও ভালভাবে উপভোগ করতে পারবেন।’’ তমলুকের মহকুমাশাসক কৌশিকব্রত দে বলেন, ‘‘কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদে ফের নৌকাবিহার চালুর ব্যাপারে এখনই আমাদের কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy