Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বালি পাচারে বিপন্ন গনগনির নিসর্গ

বেআইনি এই কারবারের জেরে নষ্ট হতে বসেছে গনগনির সৌন্দর্য, এমনই অভিযোগ গড়বেতার বাসিন্দাদের অনেকেরই। ব্লক প্রশাসনের যদিও দাবি, বালি পাচার বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রকাশ্যেই বালি তোলা চলছে গনগনিতে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ্যেই বালি তোলা চলছে গনগনিতে। নিজস্ব চিত্র

জয়দীপ চক্রবর্তী
গড়বেতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:৫৫
Share: Save:

বেআইনি বালি পাচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও নদীতে যন্ত্র নামিয়ে চলছে বালি তোলা। তা-ও একেবারে পর্যটনস্থলে।

বেআইনি এই কারবারের জেরে নষ্ট হতে বসেছে গনগনির সৌন্দর্য, এমনই অভিযোগ গড়বেতার বাসিন্দাদের অনেকেরই। ব্লক প্রশাসনের যদিও দাবি, বালি পাচার বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শিলাবতী নদীর ধারে ভূমিক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়েছে গনগনির নিসর্গ। তার টানে সারা বছর ধরে পর্যটকেরা আসেন। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষ বনভোজনের জন্য ভিড় জমান। মূল রাস্তা থেকে কাজুবাদামের বনের ভিতর দিয়ে লাল মাটির পথ ধরে গনগনিতে পৌঁছনো বাড়তি আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে।

কিন্তু সেই রাস্তা ধরে এখন পরপর ছুটছে বালি বোঝাই ট্রাক্টর। সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকেরা। রাস্তার নানা অংশে বালি ছড়িয়ে থাকছে। সম্প্রতি আরামবাগ থেকে গনগনিতে বেড়াতে আসা পর্যটক বহিত্রা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাস্তায় বালি পড়ে রয়েছে। উল্টো দিক থেকে ট্রাক্টর এসে পড়লে গাড়ি যাতায়াতে মুশকিল হচ্ছে।’’ শুধু ওই রাস্তা নয়, অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়িগুলি চলাচলের কারণে এলাকার অন্য নানা রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এর জেরেই সংস্কার হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ফের ভেঙেচুরে গিয়েছে রসকুণ্ডু যাওয়ার রাস্তাটি।

গনগনিতে শিলাবতীর জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বারবার। সতর্কীকরণ বোর্ডও রয়েছে এলাকায়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘জল কম থাকলেও নদী থেকে যন্ত্রে বালি তোলায় কোথায় গর্ত হয়ে যাচ্ছে, বোঝা মুশকিল। তাতে বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।’’

বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি, গড়বেতার বাসিন্দা প্রদীপ লোধার অভিযোগ, ‘‘এ ভাবে বালি পাচারের জেরে গনগনির ঐতিহ্য নষ্ট হতে বসেছে। কাজুবাদামের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যটকদের কাছে এলাকার ভাবমূর্তিও খারাপ হচ্ছে।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুধু গনগনি নয়, শিলাবতীর উপরে রেলসেতুর কাছে দেদার বালি তোলায় সেতুর স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁর দাবি। বেআইনি বালি কারবারের পিছনে শাসকদলের মদত রয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ। কংগ্রেসের রাজ্য কৃষক সেলের নেতা বিজয় ঘোষেরও বক্তব্য, ‘‘গনগনির সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে এই কারবার বন্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

বালি পাচারের পিছনে দলের মদতের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন গড়বেতা ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের কেউ বেআইনি বালি কারবারে জড়িত নয়। এমন কারবার যদি চলে তবে তা প্রশাসনের দেখা উচিত।’’

গড়বেতা ১ বিএলএলআরও প্রণব সাঁতরা বলেন, ‘‘আমরা গত চার মাস ধরে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। বেআইনি ভাবে বালি তোলা ও পাচারের খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনও বালিঘাটে যন্ত্র ব্যবহার করতে দেখলে শো-কজ করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE