Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

লুকিয়ে স্মার্টফোন কেনায় বকুনি, আত্মঘাতী স্কুলছাত্রী

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর মৌমিতা মুর্মু (১৪) নামে ছাত্রীর বাড়ি পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিম অর্জুনদা গ্রামে। সে পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৯
Share: Save:

বন্ধুদের অনেকের কাছেই রয়েছে স্মার্ট ফোন। নিজেরও একটি স্মার্টফোনের কেনার ইচ্ছা হয়েছিল। মা-বাবার কাছে জানিয়েছিল সেই ইচ্ছার কথা। কিন্তু তাতে জুটেছিল বকুনি। শেষে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে সম্প্রতি স্মার্টফোন কিনে ফেলেছিল সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। বিষয়টি জানাজানি হতেই ফের বকুনি দিয়েছিলেন মা-ঠাকুমা। অভিযোগ, সেই অভিমানে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হল ওই ছাত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর মৌমিতা মুর্মু (১৪) নামে ছাত্রীর বাড়ি পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিম অর্জুনদা গ্রামে। সে পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। শনিবার রাতে অসহ্য মাথা যন্ত্রমা হওয়ায় তাকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিজনেরা। রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয় মৌমিতার।

পরিবার সূত্রের খবর, স্মার্টফোন কেনার ইচ্ছা হয়েছিল মৌমিতার। এত কম বয়সে ফোন হাতে পেলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে— এই কথা ভেবে মৌমিতার বাবা মেয়ের আব্দার পত্রপাট নাকচ করে দেন। কিন্তু সপ্তাহ দু’য়েক আগে নিজের বাড়ি থেকে সাড়ে ছ'হাজার টাকা গোপনে সরিয়ে মৌমিতা নিজের খুড়তুতো দাদা তথা নবম শ্রেণির ছাত্র দীপক মুর্মুকে ফোন কিনতে দেয়। বোনের কথা মত দীপক মৌমিতাকে ফোন কিনে এনে দেয়। এর পরেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। শনিবার দুপুরে মৌমিতার মা এবং ঠাকুমা তাকে বকাবকি করেন বলে অভিযোগ।

ওই সন্ধ্যায় পড়শির বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে কীটনাশক এনে মৌমিতা তা পান করে এবং কাউকে না বলে ঘুমিয়ে যায় বলে অভিযোগ। গভীর রাতে মাথার যন্ত্রনা হওয়ায় সে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির লোকেদের কীটনাশক খাওয়ার কথা জানায়। রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয় মৌমিতার।

মেয়েকে হারিয়ে মা মুনু মুর্মূ দিশেহারা। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘ঘরে টাকা না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বড় মেয়ে ওই টাকা নিয়ে দাদার সাহায্যে ফোন কিনেছে। এর জন্য বকাবকি করেছিলাম। কিন্তু ও যে এই কাণ্ড ঘটাবে, তা ভাবতে পারিনি।’’ মৌমিতার দাদা দীপক বলে, ‘‘বোন আমাকে সপ্তাহ খানেক আগে ফোন কেনার জন্য সাড়ে ছ'হাজার টাকা দেয়। আমি ওকে ফোন কিনে দিই। এর জন্য শনিবার কাকিমা আর ঠাকুমা ওকে বকাবকি করেছিল।’’

ঘটনায় মর্মহত মৌমিতার স্কুলের শিক্ষকেরাও। রাতুলিয়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি রায় বলেন, ‘‘মৌমিতা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। ওর আত্মহত্যার ঘটনায় আমরা সবাই ভারাক্রান্ত। স্মার্টফোনের কুপ্রভাব নতুন প্রজন্মের ওপর কীভাবে পড়েছে, তা এই ঘটনা থেকে পরিস্কার।’’ সোমবার মৌমিতার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Smart Phone Scholding Girl Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE