Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ভূমি দফতরের নির্দেশে তৎপর পুরসভা

দখল করা খাসজমিতে মিলবে না পরিষেবা

পুরসভা পারেনি। সে ভাবে চেষ্টাও দেখা যায়নি। মেদিনীপুর শহরে খাসজমি বেদখল রুখতে তাই মাঠে নামল জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। পুরসভাকে চিঠি দিয়ে তারা জানাল, খাসজমি দখল করে বাড়ি তৈরি করলে পুরসভা যেন খাজনা না নেয়, হোল্ডিং নম্বর না দেয়। বিদ্যুৎ, টেলিফোন এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকেও চিঠি দিয়েছে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।

অরবিন্দনগরে টিভি টাওয়ারের মাঠে জবরদখল করা খাসজমিতে মাথা তুলেছে ঘরবাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

অরবিন্দনগরে টিভি টাওয়ারের মাঠে জবরদখল করা খাসজমিতে মাথা তুলেছে ঘরবাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০২:০৬
Share: Save:

পুরসভা পারেনি। সে ভাবে চেষ্টাও দেখা যায়নি। মেদিনীপুর শহরে খাসজমি বেদখল রুখতে তাই মাঠে নামল জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। পুরসভাকে চিঠি দিয়ে তারা জানাল, খাসজমি দখল করে বাড়ি তৈরি করলে পুরসভা যেন খাজনা না নেয়, হোল্ডিং নম্বর না দেয়। বিদ্যুৎ, টেলিফোন এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকেও চিঠি দিয়েছে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। মৌজা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তারাও যাতে ওই জায়গায় ভূমি ও ভূমি সংস্কারের অনুমতি ছাড়া বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও পানীয় জলের সংযোগ না দেয়।

এই চিঠি পেয়ে নড়ে বসেছে পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি। খাসজমিতে ওই সব সুযোগ-সুবিধে দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের চিঠি পাওয়ার পর তাদের উল্লেখ করা মৌজায় আমরা নতুন করে কোনও হোল্ডিং দিচ্ছি না। পুর আইন অনুযায়ী, খাস জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের ন্যূনতম খাজনার বিনিময়ে থাকার সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল। তা মেনেই আগে কিছু ক্ষেত্রে আমরা সেই সুযোগ দিয়েছিলাম।” বিদ্যুৎ দফতরের সার্কেল ম্যানেজার অমলেন্দু মাইতিরও বক্তব্য, “খাসজমি হলে সরকারি অনুমতি ছাড়া আমরা সংযোগ দেব না।” জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্ত জানান, সরকারি খাসজমি কেউ জোর করে দখল করতে পারে না। সরকার ইচ্ছে করলে তা লিজ দিতে পারে বা সরকারি কোনও অফিস হতে পারে। কিন্তু ভূমি দফতরে অভিযোগ আসছে, কিছু ক্ষেত্রে খাসজমি দখলের চেষ্টা হচ্ছে। তা আটকাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান অরিন্দমবাবু।

মেদিনীপুর শহরের একাধিক জায়গায় খাসজমি রয়েছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে বারপাথর ক্যান্টনমেন্ট, কর্নেলগোলা, চাঁদিয়ানা বাজার প্রভৃতি। কেরানিতলা রাঙামাটি, নরমপুর, ইস্ত্রিগঞ্জ, ও তাঁতিগেড়িয়ার একাংশেও রয়েছে খাসজমি। একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় খাসজমি দখলের চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসনিক উদ্যোগে কিছু এলাকায় বাধা দিয়ে তা বন্ধ করা গেলেও অরবিন্দনগরের মাঠ, রাঙামাটি, নরমপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় খাসজমি দখল হয়ে যাচ্ছে। শাসকদল ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তাতে মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানিয়েছে, উপযুক্ত নথি ছাড়া ওই জমি ব্যক্তি মালিকানায় রূপান্তরিত হচ্ছে না এটা ঠিক। কিন্তু তাতে কী! পুরসভাকে খাজনা দিয়ে হোল্ডিং নম্বর পেয়ে গেলেই তো কিস্তিমাত। তা দেখিয়েই জলের লাইন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন সংযোগ মিলে যাচ্ছে। কোনও পরিষেবার খামতি থাকছে না।

এ ভাবে জমি হাত বদল করিয়ে দিয়ে অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ। এ ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সব খাসজমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করার দিকে নজর দিচ্ছে ভূমি দফতর। এতে কিছুটা হলেও যে কাজ হবে তা মানছেন অনেকেই। এ ভাবে রাঙামাটি এলাকায় জমি নেওয়া এক ব্যক্তির কথায়, “জমি পেতে তেমন কোনও খরচ করতে হয়নি। পুরসভার হোল্ডিং পেতে ২ হাজার টাকা লেগেছিল। তাই বাড়ি করে নিয়েছি।” এখন কী হবে? তাঁর কথায়, “এমনটা যে হতে পারে ভেবে দেখিনি। টেলিফোন নিয়ে চিন্তা নেই। মোবাইল রয়েছে। জল নিয়েও ততটা দুশ্চিন্তা করি না। বড় জোর কিছুটা দূর থেকে আনতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রীষ্মকালে তো বাঁচা অসম্ভব! এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি বোধ হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE