E-Paper

ওটি থেকে বেড টিকিট, গুচ্ছ পরামর্শ কমিটির

সূত্রের খবর, কমিটি জানিয়েছে, রোগীর অস্ত্রোপচারের সময়ে ওটি’তে (অপারেশন থিয়েটারে) অন্তত একজন শিক্ষক-চিকিৎসককে থাকতেই হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও আরও সতর্কতা প্রয়োজন।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৯

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে একই দিনে অস্ত্রোপচার (সিজ়ার) হওয়া পাঁচ প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়াছি ও তাঁদের এক জনের মৃত্যুতে তোলপাড় চলছে। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা, স্যালাইন-সহ ওষুধপত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, না চিকিৎসায় গাফিলতি, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। তবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের রিপোর্টে স্যালাইন-সহ ব্যবহৃত ওষুধের গুণমান পরীক্ষার কথা বলেছে। পাশাপাশি, কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে ওই কমিটি।

সূত্রের খবর, কমিটি জানিয়েছে, রোগীর অস্ত্রোপচারের সময়ে ওটি’তে (অপারেশন থিয়েটারে) অন্তত একজন শিক্ষক-চিকিৎসককে থাকতেই হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও আরও সতর্কতা প্রয়োজন। বিশেষ করে সার্জিক্যাল টিম, অ্যানাস্থেটিস্ট টিমকে সতর্ক থাকতেন বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগী হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক রোগ নিয়ে। কিন্তু পরে হাসপাতাল থেকে নতুন সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন সমস্যা জটিল হয়। রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, ‘‘তদন্ত শেষে বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের কিছু মতামত জানিয়েছে। কিছু পরামর্শও দিয়েছে।’’ কমিটির পরামর্শগুলি খতিয়ে দেখে আগামী দিনে স্বাস্থ্যভবন কিছু পদক্ষেপ করতে পারে।

প্রসূতি কাণ্ডে ‘বেড হেড টিকিট’ (বিএইচটি) বিকৃতির অভিযোগও ওঠে। প্রসূতিদের পরিজনেদের দাবি, রোগী ওয়ার্ডে ভর্তির সময় তাঁর নামে দেওয়া এই টিকিটে নিজেদের মতো করে মুচলেকার বয়ান লিখেছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বর্তমানে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন প্রসূতি মিনারা বিবির বোন ফুলন খাতুনের দাবি ছিল, তাঁকে দিয়ে আগে টিপ সই করিয়ে পরে এই মুচলেকার বয়ান লিখে দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞ কমিটিও রিপোর্টে জানিয়েছে, ‘বিএইচটি’ যথাযথভাবে রাখা উচিত। অস্ত্রোপচারের আগে ব্যবস্থাপনা-সহ সবদিক খতিয়ে দেখা উচিত। পরবর্তী অবস্থার বিশ্লেষণও করা উচিত। কমিটির মতে, কোনও পর্যায়ে অবহেলা হয়েছে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অনুমান, এই পরামর্শের ভিত্তিতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের ১৩ জন ডাক্তারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭ জন জুনিয়র ডাক্তার (পিজিটি)।

নিয়মানুযায়ী, অস্ত্রোপচারের সময় একজন সিনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিতিতেই জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই কাজ করতে পারেন। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যালে ওই প্রসূতিদের চিকিৎসায় সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ।

যদিও এক জুনিয়র ডাক্তারের দাবি, প্রথম চারটি অপারেশনে কোনও জটিলতা হয়নি। সমস্যা দেখা দেয় প্রসূতিরা ওয়ার্ডে যাওয়ার পরে। পঞ্চম প্রসূতির ক্ষেত্রে অপারেশন শুরুর আগেই, এমনকি অ্যানাস্থেশিয়ার ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগেই জটিলতা দেখা দেয়। স্যালাইন চলাকালীন পঞ্চম প্রসূতির সেই সমস্ত উপসর্গ দেখা দেয়, যা ওয়ার্ডে স্থানান্তর হওয়া বাকি চার প্রসূতির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিস। তাই আরএল স্যালাইন ঘিরে সন্দেহ বাড়ে। পরে পঞ্চম প্রসূতির স্যালাইন বদলানো হয় । তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এরপর আরও দু’জনের সিজ়ার হয়েছিল। তাঁদের প্রথম থেকেই বাইরে থেকে কেনা স্যালাইন দেওয়া হয়। একই সার্জিক্যাল এবং অ্যানাস্থেটিস্ট টিম এই দু’জনেরও অস্ত্রোপচার করে। তবে তাঁদের কোনও সমস্যা হয়নি। এক জুনিয়র ডাক্তারের দাবি, ‘‘স্যালাইন কাণ্ড চাপা দিতেই শিক্ষানবিশ ডাক্তারদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saline Controversy Midnapore Medical College and Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy