E-Paper

কাটা হল ২৬টি গাছ, নীড়হারা হাজারো পাখি

বন দফতর সূত্রে খবর, শো কজ় করা হচ্ছে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকদের। কেন গাছ কাটা হয়েছে এ বিষয়ে সবিস্তারে জানতে চাওয়া হচ্ছে।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৬
Birds built nest in Arjun tree

এরকমই অর্জুন গাছে ছিল পাখিদের বাসা। কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ফের নীড় ছাড়া হল পাখিরা। এবার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসন সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। মেচেদা থেকে কোলাঘাটের পথে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে আবাসন সংলগ্ন নয়ানজুলির ধারে ৫৫টি অর্জুন গাছ ছিল। এগুলোর ২৬টি কেটে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই গাছে চার প্রজাতির বক ছাড়া স্থায়ী বাসা ছিল হাজার দুয়েক পানকৌড়ির। পাখির বাসা যুক্ত গাছ কাটায় জেলা জুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করেছে বন দফতর।

বন দফতর সূত্রে খবর, শো কজ় করা হচ্ছে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকদের। কেন গাছ কাটা হয়েছে এ বিষয়ে সবিস্তারে জানতে চাওয়া হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও অনুপম খান বলেন, ‘‘ব্যাপক ভাবে বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে ওই এলাকায়। সেই সমস্ত গাছে কাটা হয়েছে যাতে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি প্রজাতির পাখিদের বসবাস ছিল। বন দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন। এটি নিন্দনীয় কাজ। আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই গাছ সরকারি জমিতে রয়েছে। গাছ কাটার কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।’’ কাটা গাছ কোথায় কত দামে বিক্রি করা হল তা-ও খতিয়ে দেখা হবে, জানিয়েছে বন দফতর।

ঘটনার নিন্দা শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজ কলেজের জুলজি-র বিভাগীয় প্রধান শুভময় দাস বলেন, ‘‘২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পানকৌড়ির বাসাবৈচিত্র নিয়ে আমরা কাজ করেছি। ওই গাছগুলোয় কয়েক দফায় লাগানো হয়েছিল সিসি ক্যামেরা। ওই এলাকা ছিল আমাদের কার্যত মুক্ত পরিবেশের ল্যাবরেটরি। সেটি এমন নির্মম ভাবে ধ্বংস করা হবে ভাবতেই পারছি না।’’

শুভময়বাবু জানাচ্ছেন, ২০২৩ সালে তাঁরা দেখেছেন ২৪০০ পানকৌড়ি ছিল গাছগুলোয়। ২০১৩ সালে তাঁরা কাজ শুরুর সময়ে পানকৌড়ির সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩২টি। পানকৌড়ি ছাড়াও গাছগুলোয় যৌথ ভাবে বসবাস করে নাইট হেরন, নাইট জ়ার ও ক্যাটল ইগ্রেটের মতো বক। রাজ কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের তরফে পাখিদের আশ্রয় নষ্টের প্রতিবাদ করে বন দফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছেন শুভময়বাবুরা। রাজ কলেজের পক্ষে শুভময়বাবুর নেতৃত্বে পানকৌড়ি নিয়ে গবেষণা করছেন মানিক দাস, মৌমিতা কর, মৌসুমী ঘোড়ইরা। এই গবেষকেরাও হতবাক এমন কাণ্ডে।

হলদিয়ার পরিবেশ কর্মী মানিক ভুঁইয়া, শামীম আলি জানান, মেচেদা থেকে কোলাঘাটের যাওয়ার পথে নজরে পড়ত হাজার হাজার পাখি। পরিবেশ কর্মীদের দাবি পরিবেশ আদালতে যাওয়া উচিত বন দফতরের। পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও অনুপম খান বলেন, ‘‘কোনও মতেই রেয়াত করা হবে না।’’ রাজ কলেজের ছাত্রদের অভিযোগ, বেছে বেছে মোটা অর্জুন গাছ কাটা হয়েছে। ৫৫টি অর্জুন গাছের মধ্যে ২৩টি বেশ পুরনো গাছ ছিল। এই ধরনের গাছ কেটে পাখিদের বাসা নষ্ট করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজ্ঞান কর্মী প্রতীক জানা, শুচিস্মিতা মিশ্র। প্রতীকবাবুরা বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের পাশেই এই কাজ করলেও ব্যবস্থা নেয়নি কেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সেটাই বিস্ময়ের।’’ গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিক অরিন্দম রাউত বলেন, ‘‘গাছ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাটেনি। কে বা কারা গাছ কেটেছে তা জানা নেই।’’ অরিন্দম জানান, তাঁরা গাছ কাটার বিরুদ্ধে।

পূর্ব মেদিনীপুরে পাখির বাসা নষ্ট করার নজির রয়েছে। ‘পাখি দূষণ করে’ এই কারণ দেখিয়ে হলদিয়া টাউনশিপে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রজননের সময় পাখির বাসা-সহ গাছ কেটে দিয়েছিলেন। পাখির বাসা ভাঙতে দমকল ব্যবহার করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদ হয় প্রবল ভাবে। হলদিয়ার পরে কোলাঘাটে একই ঘটনা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolaghat deforestation Kolaghat Thermal Power Plant

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy