অরণ্যশহর থেকে দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। কুয়োর জল খেয়ে দিন কাটছে শবর গ্রামের বাসিন্দাদের। ঝাড়গ্রাম ব্লকের পাটাশিমূল গ্রাম পঞ্চায়েতের মনটিপা গ্রামে ২১টি শবর পরিবারের বাস। পানীয় জলের ক্ষেত্রে সকলেরই ভরসা একটিমাত্র কুয়ো।
কুয়োয় দড়ি দিয়ে জল তুলতে তুলতে বৃদ্ধা বাসন্তী শবর গজগজ করে বললেন, ‘‘আমার ছেলে ও নাতির বিয়ের হয়ে গেল। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা হল না। কুয়োর জল খেয়েই দিন কাটে।’’ সমস্যা বাড়ে গরম পড়লে। তখন জল পেতে কষ্ট হয়। নিচুপাড়ার পাশেই রয়েছে উঁচুপাড়া। সেখানে অবশ্য সাব মার্সিবল পানীয় জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু নিচুপাড়ায় নেই তেমন কোনও পাম্প। স্থানীয় বাসিন্দা বিশু শবর বলেন, ‘‘আমরা কতবার বলেছি আমাদের গ্রামে ট্যাপ দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের নিচুপাড়ায় কিছুই হয়নি।’’
ওই গ্রামের বাসিন্দা ফুলেশ্বরী শবর নিজের বিয়ে রুখে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। এর আগে ওই গ্রামে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয়নি কেউ। ফুলেশ্বরী বলল, ‘‘আমাদের পাড়ায় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা কুয়োর জল খাই। তবে কুয়োর জল সারা বছর জোগান দিলেও গরম পড়লেও জল পেতে সমস্যা হয়। তখন আবার কুয়ো ঝালাই (খুঁড়লে) করলে তবেই জল মেলে। না হলে অন্য জায়গা থেকে খাবার জল আনতে হয়।’’
পাটাশিমূল গ্রাম পঞ্চায়েতের জঙ্গল ঘেরা শবর পাড়া। অধিকাংশ বাড়ির লোকজন দিনমুজরের কাজ করে সংসার চালান। গ্রামের বাসিন্দা সুমিতা শবর ও রূম্পা শবররা বলেন, ‘‘এখন তো সব দিকে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের ট্যাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে তো কিছুই নেই।’’ পাটাশিমূল গ্রামে ক্ষমতায় রয়েছে শাসক দল তৃণমূল। পাটাশিমূল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কল্যাণী রায় বলেন, ‘‘জল পাচ্ছে না বলে ওরা কোনওদিন বলেনি। তবে শবর উঁচু পাড়ায় একটি সাবমার্সিবল রয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)