Advertisement
E-Paper

নিয়ম ভেঙে কংক্রিটের থাবা অরণ্যশহরে

শাল-পলাশের অরণ্যশহরে থাবা বসাচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গল! অরণ্যশহরের জনবহুল এলাকায় একটি বহুতল তৈরির ছাড়পত্র দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভা। অভিযোগ, পুরবিধি না-মেনে বহুতলটি তৈরি হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৫
জঙ্গল কেটে চলছে আবাসন তৈরি। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

জঙ্গল কেটে চলছে আবাসন তৈরি। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

শাল-পলাশের অরণ্যশহরে থাবা বসাচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গল!

অরণ্যশহরের জনবহুল এলাকায় একটি বহুতল তৈরির ছাড়পত্র দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভা। অভিযোগ, পুরবিধি না-মেনে বহুতলটি তৈরি হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ। মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনুসন্ধান রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”

১৯৯৫ সালে ঝাড়গ্রামে প্রথম বহুতল তৈরি শুরু হয়। এরপর গত দু’দশকে শহরের অলিগলিতেও মাথা তুলেছে একের পর এক বহুতল। বেশির ভাগ বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে পুরবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পুরবিধি অনুযায়ী, বাড়ি তৈরির সময় জমির দু’পাশে ও রাস্তার সামনে প্রয়োজনীয় জায়গা ছাড়তে হয়। উপযুক্ত নিকাশি ও অগ্নিনির্বাপক বন্দোবস্ত থাকাও জরুরি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই নিয়মের তোয়াক্কা করা হয় না বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অরণ্যশহরে এখন বহুতলের সংখ্যা ৩২টি। বাম পুরবোর্ডের আমলে ২৫টি বহুতল তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড ৭টি বহুতল তৈরির অনুমতি দিয়েছে।

এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোড়াধরা এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন বাসিন্দারা। গত বছর মে মাসে বহুতলটি তৈরি হবে জানতে পেরে পুরসভার কাছে লিখিতভাবে আপত্তির কথা জানান বাসিন্দাদের একাংশ। জনবহুল অপরিসর এলাকায় বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘরের মাঝে বহুতল তৈরি হলে নিকাশি-সহ নানা ধরনের সমস্যা হবে বলে পুরসভাকে জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে গত বছর পুরসভার স্বাস্থ্যবিধি-পরিদর্শক সরেজমিনে তদন্তও করেন।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাসিন্দাদের আপত্তি ধোপে টেকেনি। পুরসভা বহুতলটি তৈরির ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। চলতি বছরের গোড়ায় বহুতল তৈরির কাজ শুরু হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০০৭ সালের পুর আইন লঙ্ঘন করে মোট জমির আশি শতাংশের উপর বহুতলটি তৈরি করা হচ্ছে। দু’পাশে প্রয়োজনীয় জায়গা না ছাড়ার ফলে দু’পাশের বাড়িগুলির গা ঘেঁষেই কার্যত বহুতলটি তৈরি হচ্ছে। পুরসভাকে জানিয়ে কোনও সুরাহা না হওয়ায় বাসিন্দারা সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ পেয়েই মহকুমাশাসক তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিডিও, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং এসডিও অফিসের এক জন সাব
অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার।

বস্তুতপক্ষে, যে ভাবে ঝাড়গ্রাম শহরে বহুতল তৈরি হচ্ছে, তাতে আশেপাশের বাসিন্দারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার কয়েক লক্ষ টাকায় ফ্ল্যাট কিনেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না আবাসিকরা। কারণ, বেশির ভাগ বহুতলে উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা নেই। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও নেই। তাই পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি, বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। অভিযোগ, পুরসভার পূর্ত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতাদের ‘তুষ্ট’ করে প্রোমোটার-রা প্রকল্পের অনুমোদন করিয়ে নিচ্ছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে রেসিডেন্সিয়াল বহুতলের একাংশ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বহুতল গুলির জলের উত্‌সের জন্য যথেচ্ছ গভীর নলকূপ খনন করা হচ্ছে। এর ফলে, শহরে ভুগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাচ্ছে। গ্রীষ্মে সমস্যা প্রকট হচ্ছে।

ঝাড়গ্রাম পুর-নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন চক্রবর্তী বলেন, “জনবহুল এলাকার মধ্যে যেভাবে বহুতল তৈরির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে বড় ধরনের নাগরিক সমস্যা দেখা দেবে। কারণ, নিকাশি ব্যবস্থা বলতে প্রায় কিছুই নেই। শহরে পাঁচ তলা ও সাত তলা বহুতলগুলিতে আগুন লাগলে তা মোকাবিলা করার মতো কোনও বন্দোবস্ত নেই। সব চেয়ে বড় কথা, এত সুন্দর অরণ্যশহরকে কংক্রিটের জঙ্গলের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”

ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “বর্তমান জীবনযাত্রার ধরনে সর্বত্রই এখন বহুতল ফ্ল্যাট অপরিহার্য হয়ে উঠছে। বাম পুর-বোর্ডের আমলে যথেচ্ছ বহুতলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখে সীমিত সংখ্যক বহুতল তৈরির অনুমোদন দিয়েছি।” দুর্গেশবাবুর দাবি, নতুন ফ্ল্যাটগুলির ক্ষেত্রে পরিবেশ সংক্রান্ত ও অগ্নি নির্বাপক সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখে তবেই ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের যে বহুতলটি নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাতে আমরা আপত্তিজনক কিছু পাই নি বলেই ছাড়পত্র দিয়েছি।”

Jhargram municipality Skyscraper Tmc Trinamool Forest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy