Advertisement
২৪ মে ২০২৪

ব্যামোর ডাকঘর

গত বছর নভেম্বরে কিষান বিকাশ পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুদে আসলে প্রাপ্য আশি হাজার টাকা হাতে পাননি বাছুরডোবার বাসিন্দা মিতা মহাপাত্র। ঝাড়গ্রাম প্রধান ডাকঘরে রোজই এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন মিতাদেবী।

কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁ়ড়িয়ে থাকতে হয় গ্রাহকদের (বাঁ দিকে), কবে এটিএম খুলবে জানা নেই (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁ়ড়িয়ে থাকতে হয় গ্রাহকদের (বাঁ দিকে), কবে এটিএম খুলবে জানা নেই (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

গত বছর নভেম্বরে কিষান বিকাশ পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুদে আসলে প্রাপ্য আশি হাজার টাকা হাতে পাননি বাছুরডোবার বাসিন্দা মিতা মহাপাত্র। ঝাড়গ্রাম প্রধান ডাকঘরে রোজই এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন মিতাদেবী। একরাশ উদ্বেগ নিয়ে তিনি জানালেন, “সামনেই মেয়ের বিয়ে। টাকার দরকার। অথচ টাকা পাচ্ছি না। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর দু’মাস কেটে গেলেও টাকা দিচ্ছেন না ডাকঘর কর্তৃপক্ষ।”

অরণ্যশহরের নতুনডিহির বাসিন্দা রেখা দাসও দু’মাস ধরে প্রধান ডাকঘরে চক্কর কাটছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ কিষান বিকাশ পত্রের এক লক্ষ টাকা পাননি রেখাদেবী। অভিযোগ, “ডাকঘরে গেলেই কর্মীরা বলছেন, কিষান বিকাশ সার্টিফিকেট নিয়ে সমস্যা চলছে। কীসের সমস্যা সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।” মিতাদেবী ও রেখাদেবীর মতো ঝাড়গ্রাম প্রধান ডাকঘরের কিষান বিকাশ পত্রের শতাধিক আমানতকারীদের একই অভিজ্ঞতা। মাসের পর মাস ধরে ঘোরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ঝাড়গ্রাম প্রধান ডাকঘরে এক বছর আগে কোর ব্যাঙ্কিং পদ্ধতি (সিবিএস) চালু হয়েছে। কিন্তু পরিষেবা নিয়েই বিস্তর অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। এখনও বেশ কিছু তথ্য সিবিএস-এ সংযুক্ত না হওয়ায় কিষান বিকাশ পত্রের শতাধিক আমানতকারী মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা পাচ্ছেন না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকার পরিমাণ ২০ হাজার টাকার কম হলে গ্রাহকরা নগদ টাকা হাতে পাবেন। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ আমানতের পরিমাণ ২০ হাজার বা তার বেশি টাকা হলে ডাকঘরের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু তাতেও বিস্তর ভোগান্তি। আবেদন করার তিন থেকে চার সপ্তাহ পরে পাসবই মিলছে। অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদনপত্র জমা নিয়ে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ সাদা কাগজে হাতে লেখা রসিদ দিচ্ছেন। ঝাড়গ্রামের দুবরাজপুর গ্রামের সিদাম মুর্মু বলেন, “১৬ ফেব্রুয়ারি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। আমাকে কাউন্টারের কর্মী রসিদ ধরিয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি খোঁজ নিতে বললেন। কত দেরি হবে কে জানে!”

ডাকঘরের অন্যান্য পরিষেবা নিয়েও গ্রাহকদের নানা অভিযোগ রয়েছে। ডাকঘরে রয়েছে মোট ৮ টি কাউন্টার। ১ নম্বর কাউন্টারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হচ্ছিলেন সৌমেন চক্রবর্তী, রজত সামন্ত, দেবসাধন মণ্ডলদের মতো গ্রাহকরা। তাঁদের অভিযোগ, এই একটি কাউন্টারেই রেজিস্ট্রি চিঠি, স্পিডপোস্ট, পার্সেল, ইএমও, আইএমও, ডাকঘর জীবন বিমা, ই-পেমেন্ট, সিআরএফএস, ডব্লিউইউএমটি, ইআরপিও-এর মতো বিষয়গুলির কাজ ও টাকা জমা হয়। ফলে, ঘন্টার পর ঘন্টা গ্রাহকদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুব্রত বারিক বলেন, “প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কোনও আলাদা কাউন্টার নেই। রেজিস্ট্রি চিঠি পাঠাতে এসে দেড়ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ বোধ করছি।” ২ নম্বর কাউন্টারে ডাকটিকিট বিক্রি হয়। ডাককর্মী বিনন্দ দাস সকাল থেকে ঠায় কাউন্টারে বসে আছেন। তেমন লোকজন ওই কাউন্টারে দেখা গেল না। ৪ নম্বর কাউন্টারে লাইফ সার্টিফিকেট জমা নেওয়া হয়। দুপুর ১২ টা। অথচ কাউন্টারটি কর্মীশূন্য। সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা জমা দেওয়ার জন্য ৮ নম্বর কাউন্টারে দাঁড়িয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুভাষ রায়, মানিকপাড়া কলেজের ছাত্রী অনুরাধা যাদব। তাঁদের মতো অনেকেই জানালেন, “দেড় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু লাইন আর এগোচ্ছে না। কাউন্টারের কর্মীরা কাজ করেন শামুকের গতিতে। ভোগান্তি হয় গ্রাহকদের।” এর পাশাপাশি, প্রধান এই ডাকঘর চত্বরে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও শৌচালয়। ফলে, দূরদূরান্ত থেকে আসা বিশেষত মহিলা গ্রাহকদের চরম সমস্যায় পড়তে হয়।

ঝাড়গ্রাম প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার সুজন শীট বলেন, “আগে স্থানীয়ভাবে হাতেই এক দিনেই সব কাজ হত। এখন কোর ব্যাঙ্কিং-এ নতুন পদ্ধতিতে কাজ হচ্ছে। ফলে কিছু সময় লাগছে। তথ্যগত সমস্যার কারণে কিষান বিকাশ পত্রের কিছু গ্রাহকের মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা ফেরত পেতে দেরি হচ্ছে। সমস্যা মিটে গিয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই তাঁরা টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram post office specialstory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE