Advertisement
১৬ জুন ২০২৪
Recruitment scam

জেনারেল হয়ে গেলাম তো! ভয় কাটছে না ওবিসি-দের

ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন বলছেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক বিষয়।

কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ০৯:৪৫
Share: Save:

২০১০ সালের পর থেকে অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় (ওবিসি) ভুক্তদের দেওয়া সব শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এই রায়ে এক লপ্তে ৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়েছে। এতে শঙ্কিত কলেজ পড়ুয়া থেকে চাকরি প্রার্থীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল সরকার ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে বাছবিচার না করে যথেচ্ছ ওবিসি শংসাপত্র বিলি করেছে। পদ্ধতি মানা হয়নি। তাই এখন এই পরিস্থিতি।

জঙ্গলমহলে জনজাতি শংসাপত্র নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু জনজাতি শংসাপত্র বাতিলও হয়েছে। এ বার হাই কোর্টের নির্দেশে প্রকৃত ওবিসিরাও পড়েছেন আতান্তরে। যদিও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে, এই শংসাপত্র ব্যবহার করে যাঁরা ইতিমধ্যেই চাকরি বা অন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত সুবিধা পেয়ে গিয়েছেন, এই রায়ের প্রভাব তাঁদের উপর পড়বে না। চাকরি, পদোন্নতি বা ভর্তি সংক্রান্ত স্থিতাবস্থা বহাল থাকবে। তবে এখন থেকে আর ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করা যাবে না।

কিন্তু ভয় যাচ্ছে কই!

বিনপুরের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের শাহবাজ় খান ইংরেজির স্নাতক। গৃহশিক্ষকতা করেন। বলছেন, ‘‘উচ্চ আদালতের এই রায়ে 'ওবিসি-এ' থেকে আমি তো জেনারেল হয়ে গেলাম। চাকরির পরীক্ষায় সংরক্ষণের আওতা থেকে আমার মতো বহু যুবক-যুবতী বঞ্চিত হবে। এই রায়ে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল।’’ মানিকপাড়া শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সিমেস্টারের ছাত্রী পিঙ্কি মাহাতো বলছেন, ‘‘আমি 'ওবিসি-বি' ক্যাটেগরিভুক্ত। শংসাপত্র বাতিল হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের আওতা থেকে বাদ পড়ে যাব। দ্রুত ওই সমস্যার নিষ্পত্তি হোক। নইলে বহু যুবক-যুবতী বঞ্চিত হবেন।’’

ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন বলছেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক বিষয়। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের স্বার্থে রাজ্য সরকার 'ওবিসি-এ' এবং 'ওবিসি-বি' ক্যাটেগরিতে শংসাপত্র প্রদান করেছে। কিন্তু এখন তো পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলিকে আরও পিছিয়ে দেওয়া হল। আদালতের এই রায়ে ওবিসি-রা তো কার্যত জেনারেল হয়ে গেলেন।’’

হাই কোর্টের রায় নিয়ে জঙ্গলমহলের বিশিষ্টজনদের অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট চিকিৎসক জয়দেব মাহাতো বলছেন, ‘‘বেআইনি যা কিছু হচ্ছে তার বিপক্ষে আমি। এর বেশি কিছু বলব না।’’ বর্ষীয়ান সাহিত্যিক ললিতমোহন মাহাতোর কথায়, ‘‘মুসলিম সম্প্রদায় 'ওবিসি-এ' তালিকাভুক্ত। অথচ কুড়মি (মাহাতো) সম্প্রদায়কে 'ওবিসি-বি' করা হয়। তখন থেকেই আমাদের প্রশ্ন ছিল, কুড়মিদের 'ওবিসি-বি' ক্যাটেগরিতে ফেলে মাত্র ৭ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় কেন আনা হল। এই নিয়ে অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হয়েছিল। আদালতের রায় নিয়ে কিছু বলব না। তবে পদ্ধতি মেনে সুষ্ঠু সমাধান হোক।’’ ঝুমুর সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো বলছেন, ‘‘কুড়মিরা পরাধীন ভারতে জনজাতি তালিকাভুক্ত ছিলেন। অথচ সেই কুড়মিদেরই 'ওবিসি-বি' তালিকায় রাখা হয়েছিল। এই রায়ের ফলে কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিটি কার্যত মান্যতা পেল বলে আমার ব্যক্তিগত মত।’’

তবে নরমে গরমে সরব হয়েছে বিরোরী রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘এই সরকারের সব কাজই ভুলে ভরা। বাম আমলে প্রদত্ত শংসাপত্র নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। প্রকৃত উপভোক্তাদের শংসাপত্র বহাল থাকুক। পদ্ধতিগত কোনও ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে যদি দেখা যায় যাঁরা শংসাপত্র পেয়েছেন, তাঁরা সবাই পাওয়ার যোগ্য তাহলেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’

সুর চড়িয়ে রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পুলিনবিহারী বাস্কে। তাঁর কথায়, ‘‘আইনিভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হলে পুরোটাই যে জালিয়াতি সেটা ধরা পড়বে। ভোটব্যাঙ্কের জন্যই এই ধরনের জালিয়াতি করা হয়েছে।’’
জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি প্রসেনজিৎ দে বলছেন, ‘‘ভোটব্যাঙ্কের জন্যই তৃণমূলের সরকার দেদার শংসাপত্র বিলিয়েছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। আইন আইনের পথে চলুক।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো বলছেন, ‘‘উচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে তৃণমূল শাসিত রাজ্য সরকারের ভ্রষ্টাচার ও বেনিয়ম বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। আদালতের নির্দেশ সবার জন্য সমান।’’

ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো বলছেন, ‘‘ভোটের মুখে এসব বিজেপির চক্রান্ত। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে ওরা আরও পিছিয়ে রাখতে চায়। মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে ভোট করাতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তবে এতে ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না। মানুষ সব দেখছেন, ভোটে জবাব দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE