ভাঙা হয়েছে দোকান। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর পূর্বাভাস রয়েছে। তাতে জেলার উপূকল এলাকা লন্ডভন্ড হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তবে বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের মনসা বাজার দেখে মনে হচ্ছিল যেন এ দিন সেখানেই আছড়ে পড়েছে ‘রেমাল’!
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের সাউথখালিতে ছোট্ট গঞ্জ এলাকা মনসা বাজার। নন্দীগ্রাম-খেজুরি যাওয়ার রাস্তার পাশে এই বাজারে ৮০-৮৫টি দোকান রয়েছে। এলাকাটি বেশ জমজমাট। তবে এ দিন নন্দীগ্রাম থেকে খেজুরির দিকে যাওয়ার সময় মোটরবাইকের চাকা যত গড়িয়েছে, ততই মনে হয়েছে এই বাজার এলাকায় শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা কেন?
প্রশ্নের উত্তরটা অবশ্য এলাকাবাসীর কাছে অজানা হয়। এই বাজার এলাকাতেই বুধবার রাতে তৃণমূল-বিজেপি কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। তাতে একাধিক বিজেপি কর্মী আহত হওয়ার পাশাপাশি, মারা গিয়েছেন রথিবালা আড়ি নামে এক মহিলা। এ দিন রথিবালার মৃত্যুর খবর সামনে আসার পরেই বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মনসা বাজারে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। উন্মত্ত জনতা দোকানে অগ্নি সংযোগ করে। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে, আগুন ধরিয়ে অবরোধও হয়। যেতে হয় পুলিশ এবং র্যাফকে। হলদিয়া থেকে যায় দমকলের একটি ইঞ্জিন।
এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু বাজার হয়েছে লন্ডভন্ড। অন্য সময় যে বাজার দুপুরে সরগরম থাকে, এ দিন সেখানে পুলিশ ছাড়া দূর-দূর পর্যন্ত অন্য কাউকে দেখা যায়নি। অন্তত ৫টি দোকান ভাঙাচোরা এবং আধপোড়া অবস্থায় রয়েছে। অভিযোগ, লুট করা হয়েছে দোকানের সামগ্রী। এর মধ্যে একটি পাকা দোকান এমন ভাবে ভাঙা হয়েছে, যা দেখে মনে হবে সেটি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই বাজার থেকে দু’কিলোমিটারের মধ্যেই মৃত রথিবালার বাড়ি। সেই পথে কয়েকশো মিটার এগতো দেখা মিলেছিল কয়েকজন গ্রামবাসীর। তবে তাঁদের মুখে কুলুপ। অনেক খোঁজার পরে পাওয়া গিয়েছিল বাজারের এক দোকানদারকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দোকানদার বলছেন, ‘‘বাজারটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিল। বেচাকানো ভাল হচ্ছিল। একটা ছোট বচসাকে আগে কেন্দ্র করে সব শেষ করে দিল।’’
সত্যিই কি সব শেষ!
সে সবে তেমন অবশ্য চিন্তিত নন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাঁরা ব্যস্ত দোষারোপের খেলায়। নন্দীগ্রাম-১ এর তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি স্বদেশ রঞ্জন দাস বলেন, ‘‘সামনে ভোট। বিজেপি খরচা-পানি জোগাড় করতে দোকান লুট এবং ভাঙচুর করল।’’ আর বিজেপির জেলা (তমলুক) সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, ‘‘তৃণমূলই তো পরিকল্পনা করে মহিলা বিজেপি কর্মীকে খুন করেছে!’’
ভোটের ফালফলে শ্মশানের এই নিঃস্তব্ধতা ভাঙার আশা করছে দু’পক্ষই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy