Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
আত্মহত্যা না অন্য কিছু, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দ
Suicide

মহিলা কনস্টেবলের ছিন্নভিন্ন দেহ রেললাইনে

এই সুইসাইড নোট আদৌও সুষমার লেখা কিনা তা নিয়ে পুলিশের সন্দেহ আছে। সুইসাইড নোট কেনই বা তিনি স্বামীর প্যান্টের পকেটে রেখে গেলেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

 সুষমা মাহাতো (চিহ্নিত)।

সুষমা মাহাতো (চিহ্নিত)।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মানিকপাড়া শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

এক মহিলা কনস্টেবলের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহ মিলল রেললাইনে। রবিবার ভোরে ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা-সর্ডিহা রেললাইনে পড়েছিল দেহটি। ধড়-মুন্ড আলাদা হয়ে খানিকটা দূরে পড়েছিল। ঘটনাটি আত্মহত্যা না তার পিছনে অন্য কিছু রয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। রাত পর্যন্ত অভিযোগও দায়ের হয়নি। ঝাড়গ্রাম জিআরপি থানার ওসি হরি বাহাদুর শেরপা বলেন, ‘‘কেউ এখনও অভিযোগ জানায়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

মৃত সুষমা মাহাতো (৩৭) কনস্টেবল হিসেবে বছর দশেক ধরে সাঁকরাইল থানায় কর্মরত ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পুলিশের অনুমান, তাঁর মৃত্যুর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। ঘটনায় অন্য মাত্রা জুড়েছে সুষমার স্বামী ভবতোষ মাহাতোর বয়ান। ভবতোষের দাবি, তাঁর প্যান্টের পকেটে সুইসাইড নোট লিখে রেখে গিয়েছিল সুষমা। একটি কাগজে উপরে লেখা, ‘আমি স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করছি। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। হ্যাপি ভ্যালেনটাইন্স ডে টু অল’। আবার নীচে এক ব্যক্তির নাম করে মৃত্যুর জন্য দায়ী লেখা রয়েছে। ওই কাগজে ইংরেজিতে সুষমার নামও সই করা আছে। আর একটি সুইসাইড নোটে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণের কথা লেখা রয়েছে। তবে এই সুইসাইড নোট আদৌও সুষমার লেখা কিনা তা নিয়ে পুলিশের সন্দেহ আছে। সুইসাইড নোট কেনই বা তিনি স্বামীর প্যান্টের পকেটে রেখে গেলেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

সুষমার বাপের বাড়ি সাঁককরাইল থানার টিয়কাটি গ্রামে। বছর দশেক আগে তিনি মহিলা কনস্টেবলের চাকরি পান। আর ভবতোষের বাড়ি মানিকপাড়া বিট হাউসের ধাদকিনালায়। ২০০৯ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। ভবতোষ সাঁতরাগাছিতে গত ১৪ বছর ধরে রেলের টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত। দম্পতির নয় ও পাঁচ বছরের দু’টি ছেলে রয়েছে। সুষমা রোজ স্কুটি চালিয়ে সাঁকরাইল থানায় কাজে যেতেন। সুষমা এক নাবালিকা উদ্ধারের জন্য কয়েকদিন আগে ছত্তীসগঢ় গিয়েছিলেন। শনিবার ভোরে তিনি সাঁকরাইলে ফেরেন। শনিবার ছুটি নিয়েছিল সুষমা। ভবতোষের দাবি, ‘‘শনিবার রাতে সুষমা খুবই বিপর্যস্ত ছিল। আমাকে জানিয়েছিল, এক ব্যক্তি সম্পর্কের জন্য ওর উপর চাপ সৃষ্টি করছে। সে-ও পুলিশ অফিসার। রাতে আমাকে আত্মহত্যা করার কথাও বলেছিল সুষমা।’’

যদিও পুলিশ জানিয়েছে, সুইসাইড নোটে লেখা নামের কোনও পুলিশকর্মী সাঁকরাইল থানা বা মানিকপাড়া বিট হাউসে নেই। পুলিশের দাবি, শনিবার রাতে সুষমা ও ভবতোষের খুব অশান্তি হয়েছিল। তারপর ভোরে এই ঘটনা। ভবতোষের দাবি, ‘রাত তিনটে পর্যন্ত আমরা গল্প করেছি। তারপর ঘুমিয়েছি। ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ সুষমা দরজা খুলে বাইরে যায়। ভেবেছিলাম বাথরুমে গিয়েছে। অনেকক্ষণ না আসায় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নীচে নেমে ওকে দেখতে পাইনি। তারপরই রেললাইনে গিয়ে ওর দেহ দেখি।’’

যদি কারও চাপের মুখেই স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন, তাহলে অভিযোগ জানাননি কেন?

ভবতোষের জবাব, ‘‘সৎকারের পরে অভিযোগ জানাব।’’ সুষমার বাপের বাড়ির তরফেও কেউ অভিযোগ জানায়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সরকার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’

নিজস্ব িচত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE