E-Paper

আদিবাসী আবেগ ছুঁয়েই ভাষা মিছিলে মমতা, প্রশ্নও

মিছিল শেষের মুখে পাঁচমাথা মোড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘বাংলায় কথা বললেই জেলে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিচ্ছে।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২৩
গলায় আদিবাসীদের ঐতিহ্যের উত্তরীয়। এক হাতে রবীন্দ্রনাথ, অন্য হাতে বিরসা মুন্ডার ছবি হাতে তৃণমূল নেত্রী। ঝাড়গ্রামে।

গলায় আদিবাসীদের ঐতিহ্যের উত্তরীয়। এক হাতে রবীন্দ্রনাথ, অন্য হাতে বিরসা মুন্ডার ছবি হাতে তৃণমূল নেত্রী। ঝাড়গ্রামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বাংলা ভাষার সম্মানের জন্য পথে নামা। জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের সেই ভাষা মিছিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুঁয়ে গেলেন আদিবাসীদের আবেগ। রবীন্দ্রনাথের ছবির সঙ্গেই কখনও হাতে ধরলেন সিদোর ছবি, কখনও বিরসা মুন্ডার।

বুধবার ঝড়গ্রাম শহরের সারদাপীঠ মোড় থেকে ভাষা-মিছিল শুরু করেন মমতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সহ-সম্পাদক স্বামী অলকেশানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলের মঠাধক্ষ্যা পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া। গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ডান হাতে ছিল সিদোর ছবি আর বাঁ হাতে রবীন্দ্রনাথের। পরে ডান হাতে বিরসার ছবি ধরেন। পরে আবার হাতে নেন স্বামী বিবেকানন্দর ছবি। বার বার ছবি বদলে এগোন তিনি। রাস্তার ধারে রঘুনাথ সিংয়ের ছবিতেও প্রণাম করেন মমতা। মিছিলে শামিল অন্যদের হাতেও বাঙালি মনীষীদের পাশাপাশি স্মরণীয় আদিবাসী ব্যক্তিত্বের ছবি ছিল।

মিছিল শেষের মুখে পাঁচমাথা মোড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘বাংলায় কথা বললেই জেলে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি, বিবেকানন্দ কোন ভাষায় কথা বলতেন? জাতীয় সঙ্গীত কোন ভাষায় লেখা? স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল বাংলা। বাংলা ছাড়া ভারতবর্ষ ও সারা বিশ্ব হয় না। নাসাতেও বাংলার ট্যালেন্ট রয়েছে।’’

জঙ্গলমহলের মাটিতে বাংলা ভাষার এই মিছিল নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় যে সাঁওতাল, কুড়মি, মুন্ডাদের বাস, তাঁদের কারও মাতৃভাষা বাংলা নয়। বরং বাংলা তাঁদের উপর চেপে রয়েছে। মাতৃভাষায় পড়াশোনার দাবিতে তাঁরা আন্দোলনও করছেন। ভারত মুন্ডা সামাজের সাধারণ সম্পাদক নবীনচন্দ্র সিং বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিরসা মুন্ডার ছবি নিয়ে হাঁটলেন। অথচ মুন্ডারি ভাষার সরকারি স্বীকৃতিই মেলেনি। বাধ্য হয়ে বাংলায় পড়তে হচ্ছে।এটাও মুখ্যমন্ত্রীর ভাবা সরকার।’’ একই সুরে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠনের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো হয়নি বলেও অভিযোগ কুড়মি সমাজের নেতাদের। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘২০১৮ সালে ভাষা কুড়মালি ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষার স্বীকৃতি দিলেও এখনও অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পঠন-পাঠনে কুড়মালি ভাষার উপর বাংলা ভাষাকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কুড়মালিতে পড়াশোনা করা তো আমাদের মৌলিক অধিকার।’’

সাঁওতালি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালু হলেও পরিকাঠামোয় ঘাটতির অভিযোগ তুলছেন আদিবাসী নেতারাও। আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতা ঢেঙা হাঁসদা বলেন, ‘‘অলচিকিতে সাঁওতালি মাধ্যমের জন্য আলাদা শিক্ষা বোর্ড প্রয়োজন। সরকারকে বার বার নিয়েছি।কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ ও শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান রবীন টুডুর পাল্টাবক্তব্য, ‘‘ঝাড়খণ্ডের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যেও সাঁওতালিমাধ্যমে পড়াশোনা শুরু হয়নি। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্মস্থান ওড়িশাতেও হয়নি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy