Advertisement
০৩ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

শুভেন্দু না অভিষেকপন্থী! লড়াই তৃণমূলে

পূর্ব মেদিনীপুরে এবার গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬২টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির দুটি আসনে আগেই বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন শাসক দলের প্রার্থীরা।

শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।

কেশব মান্না
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

আজ রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোট। অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূলের একাধিপত্য ছিল নন্দীগ্রামের এই জেলায়। কিন্তু এবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে নানা রকমের বিশ্লেষণ চলছে কয়েক দিন ধরে।

পূর্ব মেদিনীপুরে এবার গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬২টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির দুটি আসনে আগেই বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন শাসক দলের প্রার্থীরা। কিন্তু বাকি সব আসনে কঠিন লড়াইয়ের মুখে রাজ্যের শাসকদল। কোথাও প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি, আবার কোথাও বামেরা। আবার কোথাও কোথাও সরাসরি নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই শাসকের। এর মধ্যই জেলা জুড়ে বিশেষত তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা এলাকায় ‘অন্তর্ঘাতে’র আশঙ্কা দেখছেন দলের অনেকেই। কারণ একটাই— শুভেন্দুহীন তৃণমূলে একদা তাঁর ঘনিষ্ঠরা অনেকেই এবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রার্থী। কেউ ভোট আবার পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন। তলেতলে তাঁদের সঙ্গেই শুভেন্দুর যে আঁতাত নেই, তা নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। তাই রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এবারের ভোট যুদ্ধটা যেমন শুভেন্দু বনাম তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হবে, তেমনই তৃণমূলের অন্দরেও লড়াইটা হবে শুভেন্দুপন্থী বনাম অভিষেকপন্থী।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এক সময়ের অধিকারী পরিবারের কাছের ‘লোক’ ছিলেন মধুরিমা মণ্ডল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু যোগ দেন বিজেপিতে। সে সময় মধুরিমা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। গত বিধানসভা ভোটে সেভাবে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি তাঁকে। তবে এবার পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের ৬১ নম্বর আসনে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী মধুরিমা। শুধু তাই নয় পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার জন্য কাঁথি সাংগঠনিক জেলার যে কমিটি রয়েছে, তিনি তারও দায়িত্বে। একই রকম ভাবে খেজুরি-২ ব্লকে জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি রণজিৎ মণ্ডল। তিনিও শুভেন্দুরও ঘনিষ্ঠা হিসাবে পরিচিত। আবার কাঁথি-১ ব্লকে জেলা পরিষদের ৬০ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী শেখ আনোয়ারউদ্দিনও অধিকারী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এক সময়।

কাঁথি দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতিতে দলীয় প্রতীক না পেয়ে নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেবাংশু মাইতি। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতীকে লড়ছেন দেবকুমার পন্ডা। যিনি আবার অভিষেক শিবিরের প্রার্থী বলে পরিচিত। একই রকম ভাবে অভিষেকপন্থী হিসাবে পরিচিত রামনগর-২ ব্লকে তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী তমালতরু দাস মহাপাত্র, রামনগর-১ ব্লকে জেলা পরিষদ প্রার্থী খালেক কাজি, শম্পা মহাপাত্র। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকে জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছেন তরুণ জানা। কাঁথি-১ ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী সভাপতি প্রদীপ গায়েন। এইসব আসনগুলি শাসক দল ধরে রাখতে পারে কি না, এখন সেটাই বড় পরীক্ষা।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার দাবি করেছেন, সরকার এবং তৃণমূলে না কি তাঁর লোকজন রয়েছেন। গত বিধানসভা ভোটে রাজ্যব্যাপী সবুজ ঝড়ের মধ্যেও পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি আসনের মধ্যে সাতটি হাতছাড়া হয়েছিল ঘাসফুল শিবিরের। নন্দীগ্রাম-সহ প্রায় প্রতিটি আসনে অন্তর্ঘাত হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের একাংশের। এবার সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না একেবারে। যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তরুণ জানা বলছেন, ‘‘কেউ যদি তলে তলে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তবুও মানুষ আর ভুল করবেন না।’’

অন্যদিকে, ভাল ফলাফলের ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি শিবির। এ ব্যাপারে বিজেপির তমলুক সংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "গোটা জেলা জুড়ে আমরা ভালো ফলাফল করব। মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিলে তার ফল কী হয়, তা গত বিধানসভা ভোটেই এই জেলার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন।’’ একই রকম ভাবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলছেন, "গত ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এবার আমরা আশার আলো দেখছি। দলের প্রচারে ভালই সাড়া মিলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE