‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই!’
বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রচলিত এই প্রবাদের সঙ্গে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের মিল খুঁজে পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই প্রকল্পের একাংশ উপভোক্তা প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও বাড়ি তৈরির কাজে গতি আনেননি। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলার কথা মে মাসেই। কাজে গতি না এলে সংশ্লিষ্ট উপভোক্তা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে সমস্যায় পড়তে পারেন। বাড়ির কাজ কতদূর এগিয়েছে, প্রশাসন নজরদারি শুরু করেছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি মানছেন, ‘‘নজরদারি রয়েছে।’’
রাজ্যের আবাস প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘বাংলার বাড়ি’। এই প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও এখনও অনেকে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেননি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এমন উপভোক্তা রয়েছেন সাড়ে সাতশোরও বেশি। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের জমির নথি না থাকায় সমস্যা হয়েছে।
এই প্রকল্পে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা করে টাকা দেওয়া হয়েছে গত ডিসেম্বরে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ সারতে উপভোক্তাদের কাছে যাচ্ছেন আধিকারিকেরা। একেবারে পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে নজরদারি শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে আবাস প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ১ লক্ষ ২ হাজার ১১০। কারা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন, কারা এখনও শুরু করেননি, তা দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শন চলছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১ লক্ষ ১ হাজার ৫১০ জন উপভোক্তার ক্ষেত্রে পরিদর্শন হয়েছে। দেখা গিয়েছে, এরমধ্যে ৭৭৯ জন এখনও বাড়ি তৈরির কাজ শুরুই করেননি। অনেক ক্ষেত্রেই কাজ এগোচ্ছে ধীর গতিতে। নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন ১ লক্ষ ৭৩১ জন উপভোক্তা। এরমধ্যে ‘লিনটেল’ (বাড়ির দরজা-জানলা বা কোনও ফাঁকা অংশের উপরের ভার বহন করার জন্য বীম সদৃশ্য কাঠামো) পর্যন্ত কাজ এগিয়েছেন ৩৯,৮৬০ জন। এখনও ‘লিনটেল’ অবধি কাজ এগোতে পারেননি ৬০,৮৭১ জন। মেদিনীপুর গ্রামীণের এক উপভোক্তার কথায়, ‘‘ইট, বালি, সিমেন্টের যা দাম! এ বার লিনটেলের কাজে হাত দেব!’’
রাজ্যে ইতিমধ্যে ১৬ লক্ষ উপভোক্তা বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন। তালিকাভুক্ত, বাকি ১২ লক্ষ উপভোক্তাও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ৩ বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছে (বরাদ্দ)। তাই আমাদের টাকা থেকে ১৬ লক্ষ বাংলার বাড়ি করবার জন্য ইতিমধ্যে অর্ধেক টাকা দিয়েছি। বাকি অর্ধেক টাকাও পেয়ে যাবেন ওই ১৬ লক্ষ। মে মাসে পাবেন।’’ বাকি ১২ লক্ষ এখনও কোনও টাকা পাননি। সেই অসন্তোষও নিরসনের চেষ্টা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘১২ লক্ষকে ডিসেম্বরে দেব প্রথম পর্যায়ে টাকা। আর মে-তে (২০২৬ সালের) দেব দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা।’’
সম্প্রতি ব্লকগুলিকে নিয়ে জেলা প্রশাসন ভার্চুয়াল বৈঠকও করেছে। এই বৈঠকে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের উপভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে ইমারতি দ্রব্য পান, তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। মে মাসের গোড়ার দিকেই যাতে প্রথম দফার কাজ শেষ হয়, তাও সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)