হাসিখুশি: বিজয়ার অনুষ্ঠানে বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা। —নিজস্ব চিত্র।
বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কিছুটা সময় কাটালেন একদল কলেজ পড়ুয়া। একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতেই ওঁরা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলেন। প্রবীণ মানুষগুলির মনের ভার লাঘব করতে চুটিয়ে গল্পও হল। সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাতে যেমন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা যোগ দিলেন, তেমন কলেজ পড়ুয়ারাও সামিল হলেন। কেউ কবিতা পড়েছেন, কেউ শুনিয়েছেন গান।
মঙ্গলবার মেদিনীপুরের নজরগঞ্জের এক বৃদ্ধাশ্রমে এই বিজয়া সম্মিলনীর আসর বসে। একদল কলেজ পড়ুয়ার এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই। পড়ুয়াদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের বিজয়া সম্মিলনীতে ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক রজনীকান্ত দোলই, মেদিনীপুর কলেজের অধ্যাপক সত্যরঞ্জন ঘোষ, শহরের রয়্যাল একাডেমির অধ্যক্ষ সত্যব্রত দোলই প্রমুখ।
সত্যব্রতবাবু বলছিলেন, “কলেজ পড়ুয়াদের এই ভাবনাটাই অন্য রকম। বৃদ্ধাশ্রমে এসে একাকী প্রবীণদের বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো, তাঁদের সঙ্গে গল্প করার কথা আজকের দিনে ক’জন ভাবেন? খুব ভাল উদ্যোগ। এ দিনের অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে নিজেরই ভাল লেগেছে। সকলেরই উচিত, এ ভাবে প্রবীণদের পাশে এসে দাঁড়ানো।” বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক, সত্তর ছুঁইছুঁই অশোকা মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “ওদের সঙ্গে গল্প করতে পেরে মনটা ভরে গিয়েছে।” অশোকাদেবী এ দিনের অনুষ্ঠানে কবিতা শুনিয়েছেন, গানও গেয়েছেন।
মেদিনীপুরে কলেজের কয়েকজন পড়ুয়া মিলে ‘প্রয়াস’ নামে এক সংস্থা গড়ে তুলেছেন। সংস্থার উদ্যোগে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচি হয়। এ বার পুজোর মুখেই যেমন কয়েকজন পথশিশুকে নতুন জামা দেওয়া হয়। নতুন জামা পেয়ে ঝলমলে হয়ে ওঠে কচি মুখগুলো। ওই সংস্থার পক্ষে সৌমেন সাউ বলছিলেন, “আমরা ওদের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম। এই হাসিমুখই আমাদের সবথেকে বড় পাওয়া।”
এ দিনও সেই তাগিদ থেকেই বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কলেজ ছাত্র সুজিত ঘোষ, সৈকত জানাদের কথায়, “বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হল। এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে একেবারে নতুন। ওঁদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা সকলেই খুব খুশি। ওঁদের হাসিখুশি দেখে মন ভরে গিয়েছে।” মেদিনীপুরে নজরগঞ্জের এই বৃদ্ধাশ্রমে বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ- বৃদ্ধা থাকেন। তাঁদের সন্তানরা দূরে থাকেন, কেউ আবার নিঃসন্তান। কারও আবার বাড়িতে জায়গা নেই, সন্তান দায়িত্ব নেয় না বলে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। উৎসবের দিনগুলিতেও একা থাকার যন্ত্রণায়, পরিজনের মুখ দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রণায় বিদ্ধ ওঁদের অনেকেই। নিজের মধ্যেই দিনের পর দিন গুমরেছেন। এমন একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের সকলকে একটি কলম উপহার দিয়েছেন কলেজ পড়ুয়ারা। প্রবীণদের মিষ্টিমুখও করিয়েছেন তাঁরা। সৌমেন বলছিলেন, “ওঁদের স্নেহের পরশ পেয়ে ভাল লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy