হাসপাতালে ওষুধের মান নিয়ে নালিশ এড়াতে তৎপরতা। সম্প্রতি এক নির্দেশিকা দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ‘ড্রাগ অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ব্রাঞ্চ’। ব্যবহারের আগে ওষুধের উপরে নিয়মিত নজরদারি চালানোর কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি নজরে ‘কোল্ড চেন’।
ওষুধ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকেই ‘কোল্ড চেন’ বলা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা এসেছে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপারের দফতরে। সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরেও। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী মানছেন, ‘‘নির্দেশিকায় ‘কোল্ড চেনে’র রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে করার কথা বলা হয়েছে।’’ জেলার এক হাসপাতালের সুপার মানছেন, ‘‘কী ভাবে ‘কোল্ড চেন’ বজায় রাখা উচিত, বজায় না- রাখলে কী কী সমস্যা হতে পারে, সেই ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের কোনও ধারণা নেই। এবং সেটা খুবই বিপজ্জনক।’’
বিভিন্ন সংস্থার নামে ৫০-৫৫টি ভেজাল ওষুধ ঢুকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেই ওষুধ যাতে সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার বা ওষুধের দোকানে বিক্রি না- হয়, সে বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বুধবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ভেজাল ওষুধের বিষয়ে তিনি সতর্ক করেছেন প্রশাসনকে। বিশেষত জেলা ও ব্লকস্তরের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কোন কোন সংস্থার নামে, কোন কোন ওষুধ ভেজালের তালিকায় রয়েছে, সে ব্যাপারে মানুষকে জানাতে ওষুধের দোকানের সামনে তালিকা টাঙানোরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
জেলার একাংশ চিকিৎসকের মতে, নিছক সংরক্ষণের গাফিলতিতে রোগ নিরাময়ের ওষুধও কখনও কখনও বিষবৎ হয়ে ওঠে। সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা ওষুধের মান নিয়ে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। অনুযোগ, একাংশ হাসপাতালে যে ভাবে ওষুধ রাখা হয়, সেই প্রক্রিয়াতেই একাধিক গোলমাল রয়েছে। কোন ওষুধ কত তাপমাত্রায় রাখতে হবে, তার নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। একাংশ হাসপাতালে ‘কোল্ড চেন’ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা দেখাই হয় না নিয়মিত। কয়েক মাস আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। একাংশ রোগীর পরিজনের নালিশ ছিল, প্রসূতি মৃত্যুর পিছনে স্যালাইন সহ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও থেকে থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য দফতরের ‘ড্রাগ অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ব্রাঞ্চে’র নির্দেশ, হাসপাতালের স্টোরে ওষুধের যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজন মতো ওষুধ আনাতে হবে। মজুত দু’মাসের বেশি সময় থেকে যেতে পারে, এমন সংখ্যক ওষুধ আনানো যাবে না। সূত্রের খবর, শীঘ্রই ‘মডেল ড্রাগ স্টোর’ সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা জারি হতে পারে। যেখানে ‘মডেল ড্রাগ স্টোরে’র পরিকাঠামোগত এবং পরিচালনাগত কিছু বিষয় উল্লেখ থাকবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)