Advertisement
E-Paper

গালে আঁচড়ে এ কেমন শাস্তি!

লিখিন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি অসমের হাইলাকান্দির গুটগুটি গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের লিখিন থাকে অরণ্যশহরের বলরামডিহিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ছাত্রাবাসে। উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অনাথ ও দুঃস্থ শিশু-কিশোররা থাকে ওই ছাত্রাবাসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩
ছাত্র-শিক্ষক: জখম ছাত্র লিখিন।নিজস্ব চিত্র

ছাত্র-শিক্ষক: জখম ছাত্র লিখিন।নিজস্ব চিত্র

ফোলা ফোলা নরম গালে দু’ইঞ্চি লম্বা দগদগে ক্ষত। শিক্ষক দিবস থেকে যন্ত্রণা বয়ে চলেছে বছর আটের লিখিন রিয়াং। ব্যথায় জ্বর এসেছে তার, বিষিয়ে গিয়েছে গালের ক্ষত। এমনকী মুখ খুলতেও অসুবিধা হচ্ছে , বন্ধ হয়ে গিয়েছে খাওয়া-দাওয়া। তবু মুখ ফোটেনি।

দু’দিন পরে জানা যায়, ক্লাসে অঙ্কে ভুল হয়ে গিয়েছিল লিখিনের। তাই শিক্ষক পেনসিল দিয়ে আঁচড়ে শাস্তি দিয়েছেন তাকে।

লিখিন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি অসমের হাইলাকান্দির গুটগুটি গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের লিখিন থাকে অরণ্যশহরের বলরামডিহিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ছাত্রাবাসে। উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অনাথ ও দুঃস্থ শিশু-কিশোররা থাকে ওই ছাত্রাবাসে। নিজস্ব স্কুল না থাকায় লিখিনের মতো ১৩ জন আবাসিক বাছুরডোবার ভারতমাতা প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা করে।

ভারতমাতা স্কুলের শিক্ষক সুমিত মণ্ডলের দিকে অভিযোগের তির। শুক্রবার লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। তারপরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা দফতর। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা এ দিন নিজে ওই স্কুলে যান। কথা বলেন অন্য শিক্ষক, শিক্ষিকা, লিখিনের সহপাঠীদের সঙ্গে। অভিযুক্ত শিক্ষক সুমিত মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, তাঁকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে।

লিখিনের ছাত্রাবাসের কর্মকর্তা অমলেন্দু দাস জানান, মঙ্গলবার স্কুল থেকে ফেরার পরই গালের দাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় লিখিনকে। কিন্তু বরাবর মাথা নিচু করে থেকেছে লিখিন। ক্রমশ ওই ক্ষত বিষিয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের আউটডোরে লিখিনকে দেখানো হয়। তখন লিখিন স্বীকার করে অঙ্ক না পারার ‘শাস্তি’ দিয়েছেন সুমিত স্যার।

অভিযুক্ত শিক্ষক সুমিত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

এ দিন ভারতমাতা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা ঘোষ মাহাতো, সহ-শিক্ষক বিপ্লব মিদ্যা, মঞ্জুশ্রী শীট-রা জানালেন, বুধবার প্রার্থনার সময়ই তাঁরা লিখিনের গালের দাগ দেখে প্রশ্ন করেছিলেন। তখন সুমিতবাবুও তাঁদের সঙ্গে প্রশ্ন করেন কী ভাবে দাগ হয়ে গেল ওই ছাত্রের গালে। কিন্তু লিখিন কিছু বলতে চায়নি। বৃহস্পতিবার সুমিতবাবু স্কুলে যাননি। সে দিনই কয়েকজন পড়ুয়া স্কুলে জানায় লিখিনকে দেওয়া ‘শাস্তি’র কথা। শুক্রবার লিখিন-সহ ছাত্রাবাসের ১৩ জন আবাসিক ছাত্রকে স্কুলে যেতে দেননি এই
ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরার কাছে সুমিতবাবু দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি ওই পড়ুয়াকে কোনও শাস্তি দেননি। নারায়ণবাবু পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘একটি শিশু কী ষড়যন্ত্র করবে? গালে কাটা দাগ দেখেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি?’’ সদুত্তর দিতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পরে নারায়ণবাবু বলেন, “গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” নারায়ণবাবুর জেরার মুখে প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা ঘোষ মাহাতো এদিন স্বীকার করেন, সুমিতবাবুর বিরুদ্ধে এর আগেও পড়ুয়াদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সুমিতবাবুর সঙ্গে প্রভাবশালী মহলের যোগাযোগ রয়েছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছেন।

Punishment Teacher Student ঝাড়গ্রাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy