গুলিবিদ্ধ ছাত্র দীপক সাউ
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর পুরনো বিরোধের জেরে গুলি চলল উল্টোরথের মেলায়। জখম হল নিরীহ এক কিশোর। ঘটনায় ক্ষিপ্ত জনতা এক তৃণমূল নেতার ভেড়ি লাগোয়া ঘরে ভাঙচুর করে, আগুনও লাগালো।
সোমবার রাতে কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের বাড়চণ্ডীভেটি গ্রামে গুলিতে জখম বছর চোদ্দোর দীপক সাউকে প্রথমে কাঁথি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীর ব্যবস্থাপনায় তাকে সরানো হয় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়া গুলির ঘায়ে দীপকের খুলির বাঁ দিকের হাড় ভেঙেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও হয়েছে। মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কিশোরটির অবস্থা সঙ্কটজনক।
ঘটনায় বাড়চণ্ডীভেটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা রাধারানি দাসের স্বামী কাশীরাম-সহ ১৪ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন দীপকের আত্মীয় (সম্পর্কে দাদু) ইন্দুভূষণ গিরি। কাশীনাথ এলাকায় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত। আবার ইন্দুভূষণবাবু লাগোয়া আঁউরাই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান, তৃণমূলের দেশপ্রাণ ব্লক সম্পাদক।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অবশ্য কেউ ধরা পড়েনি। এলাকায় নেই কাশীরাম ও রাধারানিদেবী। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ শিশির অধিকারী এখন দিল্লিতে। দলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, “বাম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনায় জড়িত।” তবে কি কাশীরাম তৃণমূলের কেউ নন? মামুদ হোসেনের জবাব, “আমাদের দলে যোগ দিলেও কাশীরাম তলায় তলায় বাম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।”
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কাশীরামের সঙ্গে তৃণমূলের বুথ কমিটির সম্পাদক খোকন জানার বিরোধ অনেক দিনের। দু’জনেরই বাগদা চাষের ভেড়ি রয়েছে। ফলে, ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল।
কিন্তু বাম আমলে সিপিআই কর্মী হিসেবে পরিচিত কাশীরাম ও রাধারানি ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলে নাম লেখাতে চাইলে আপত্তি করেন খোকন। দলে সেই আপত্তি গুরুত্ব পায়নি। উল্টে তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে জেতেন রাধারানি। এরপর থেকেই কাশীরাম ও খোকনের বিরোধ আরও বাড়ে। খোকনের দাবি, “সেই ঝামেলা থেকেই প্রতিহিংসার বশে আমাকে খুনের চেষ্টা হয়েছে।”
বারচণ্ডীভেটি গ্রামে রাধামন্দির মন্দির লাগোয়া এলাকায় উল্টোরথের মেলা বসেছিল। অদূরে কাশীরামের বাগদার ভেড়ি, পাশে কর্মীদের থাকার ঘর। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ মেলার দোকানে দাঁড়িয়ে খোকন যখন রোল খাচ্ছিলেন, তখন ওই ঘর থেকেই তাঁকে নিশানা করে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেই গুলি দীপকের মাথা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। দীপক তখন বন্ধুদের সঙ্গে দোকানে বসে চাউমিন খাচ্ছিল। চোট লাগতেই সে চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে জনতা কাশীরামের ভেড়ি লাগোয়া ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।
ঘোড়াঘাটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র দীপক ও তার বোন সুপ্রিয়া স্থানীয় ছনবেড়িয়া গ্রামে মামাবাড়িতে থাকে। তাদের মা মণিমালাদেবী কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন। আর বাবা অনেক দিন আগেই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে চলে গিয়েছেন। নাতি জখম হওয়ায় উদ্বিগ্ন দাদু গৌরহরি গিরি ও দিদিমা রেণুকাদেবী বলেন, “এমন কিছু যে ঘটতে পারে, ভাবতে পারিনি!”
দীপক জখম হওয়ার খবরে ফুঁসছে গোটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, “তৃণমূলের দু’পক্ষের রেষারেষিতে একটা বাচ্চা ছেলেকে জখম হতে হবে, সেটা মানা যায় না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy