E-Paper

তৃণমূলের প্রধান ঝাঁট দেন পঞ্চায়েত অফিসে

জিরাপাড়া পঞ্চায়েতে দু'জন অস্থায়ী সাফাই কর্মী আছেন। এক জন পুরুষ, অন্য জন মহিলা। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে তাঁদের পারিশ্রমিক হিসাবে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪৮

প্রধান। তা-ও রাজ্যের শাসক দলের। তিনি ঝাঁট দিচ্ছেন পঞ্চায়েত অফিসে!

অস্থায়ী সাফাই কর্মী না এলে, ঝাঁটা হাতে দফতর ঝাড়পোঁছে নেমে পড়েন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ২ (গোয়ালতোড়) ব্লকের জিরাপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুমণি হাঁসদা। তাঁর এই কাজে উচ্ছ্বসিত দলের অনেকে। প্রশংসা করছেন বিরোধী নেতাও।

জিরাপাড়া পঞ্চায়েতে দু'জন অস্থায়ী সাফাই কর্মী আছেন। এক জন পুরুষ, অন্য জন মহিলা। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে তাঁদের পারিশ্রমিক হিসাবে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। প্রতি মাসে নয়, মাঝেমধ্যে। ফলে, হামেশা কাজে আসেন না তাঁরা। অসুস্থ হওয়ায় পুরুষ সাফাইকর্মী এখন আসছেন না। মহিলা সাফাইকর্মীও অন্য কাজের দৌলতে পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করেছেন। পঞ্চায়েত অফিস চত্বরে জমছিল আবর্জনা, গাছের ঝরা পাতা। ঝাঁটা হাতে তাই সাফাইয়ে নামেন খোদ প্রধান।

প্রায় তিন কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পঞ্চায়েতে পৌঁছে ব্যাগ রেখে ঝাঁটা হাতে নেমে পড়েন সুকুমণি। বিকেলে বাড়ি ফেরার আগেও অফিস চত্বর সাফ করেন। সুকুমণি বলছেন, ‘‘কেন সাফাই করব না! এটা আমার অফিস। প্রধান হয়েছি তো কী হয়েছে!’’ জিরাপাড়ার তৃণমূল নেতা পিনাকী ঘোষের কথায়, ‘‘দিদি (সুকুমণি) কোনও কাজকে ছোট মনে করেন না।’’

ছোটনাকদনা গ্রামের খেনকাডাঙা পাড়ায় টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে থাকেন সুকুমণি। আবাস যোজনার সমীক্ষায় বাড়ি পাননি। স্বামী কালিরাম দিনমজুর। সুকুমণি নিজেও এক সময় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। সামান্য কৃষিজমি আছে। তবে তা একফসলি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের এক জন দিনমজুর। সুকুমণির সাইকেলটি পুরনো। প্রধান বললেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিসে যেতে হয় বলে এখন দিনমজুরিতে যেতে পারি না। তবে প্রধানের ভাতা পাই। স্বামী আর ছেলে খেটে যা পায়, সংসার চলে যায়।’’

দীর্ঘদিনের তৃণমূল কর্মী সুকুমণি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিপিএমকে হারিয়ে তিনি পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছিলেন। মাঝে আর দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। গত বার জিতে প্রধান হয়েছেন। গোয়ালতোড়ের বিজেপি নেতা পশুপতি দেবসিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূল আর দুর্নীতি এখন কার্যত সমার্থক। সেখানে এক পঞ্চায়েত প্রধানের এমন জীবনযাত্রা নজর কাড়বেই।’’ গড়বেতা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের দীনবন্ধু দে বলেন, ‘‘জিরাপাড়ার প্রধান সত্যিই অনুকরণযোগ্য।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Goaltore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy