মুষলধারে বৃষ্টি ও সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। তার জেরে দিঘা-সহ সংলগ্ন উপকূলে সতর্কতা জারি করল প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। ফলে উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। আর সেই উত্তাল সমুদ্রের টানেই পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে দিঘায়। সঙ্গে দোসর সপ্তাহান্তে তিনদিনের টানা ছুটি।
রামনগর-১ এর বিডিও আশিস কুমার রায় বলেন, ‘‘নিম্নচাপের জন্য সমুদ্র উত্তাল। ফলে দিঘায় পর্যটকদের সমুদ্র স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’’ আজ, শুক্রবার মহরম, কাল শনিবার ও পরদিন রবিবার— তিন দিনের টানা ছুটি পেয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই বহু পর্যটক সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। পর্যটকদের উদ্দেশে পুলিশ সৈকতে মাইকে বারবার সমুদ্র স্নানের ক্ষেত্রে সতর্কতার কথা ঘোষণা করে। নুলিয়া ও বিপর্যয় বাহিনীর সদস্যদের এদিন সকাল থেকেই তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হ্যান্ড মাইক নিয়ে সৈকতে তাঁদেরও পর্যটকদের সতর্ক করতে দেখা যায়। নুলিয়া রতন দাস জানান, “ঝোড়ো বাতাসের জন্য স্বাভাবিকের তুলনায় ঢেউয়ের তোড় বেশি রয়েছে সমুদ্রে। তবে আমরা পর্যটকদের সৈকতের পাশে থাকা হলুদ দড়ি অতিক্রম করতে মানা করছি।’’ ওল্ড দিঘায় এদিন নিরাপত্তা ছিল অনেক বেশি আঁটোসাটো। কারণ, ওল্ড দিঘাতেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলে নুলিয়ারা জানিয়েছেন।
আবহাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক হয় নবান্নে। পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সামুদ্রিক ঝড়, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, জেলা প্রশাসন—সকলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে মৎস্যজীবীদের নিষেধ করা হয়েছে। যে সব মৎসজীবী সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে। পর্যটকদেরও সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।’’
কলকাতার বেহালা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন তন্ময় রায়। তিনি বলেন, “এর আগে বেশ কয়েকবার দিঘায় এসেছি। কিন্তু এমন ঝোড়ো হাওয়া ও মেঘলা আবহাওয়া দেখিনি। সমুদ্রে স্নান করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু উত্তাল সমুদ্রে নামতে দিচ্ছেন না নুলিয়ারা। তবে পাড় থেকেই ঢেউ দেখে মন জুড়িয়ে গেল।’’
নদিয়ার সুমন সাঁতরার কথায়, “বৃষ্টির সমুদ্র আরও মোহময়ী। নিরাপত্তা রক্ষীরা যেতে দিচ্ছেন না। তা না হলে এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই স্নানের মজা নিতাম।’’
বিশ্বকর্মা পুজোর পর দিঘায় ভিড় বাড়ায় খুশি হোটেল ব্যবসায়ীরাও। বৃহস্পতিবার থেকেই সোমবার পর্যন্ত দিঘার অধিকাংশ হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে বলে দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর। ভিড়ের সুযোগে কোনও হোটেল যাতে বেশি ভাড়া না হাঁকেন সেদিকে কড়া নজর রেখেছেন তাঁরা। সংগঠনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দিঘায় এসে হোটেল মালিকদের এই বিষয়ে সতর্ক করে গিয়েছেন। তার পর থেকে আমরা সজাগ। কোনও হোটেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
খুশি খাবারের দোকানের মালিকেরাও। ওল্ড দিঘার রোল ও চাউমিন সেন্টারের এক ব্যবসায়ী জানালেন, “ভিড় হওয়ায় বিক্রি ভাল। খবর কাগজে পড়েছিলাম , আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে পুজোর আগে বৃষ্টি হবে। ভেবেছিলাম বৃষ্টি হলে পর্যটক দিঘায় আসবে না। চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু দেখলাম আমার ধারণা ভুল। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই পর্যটকেরা আসছেন।’’