সপ্তাহের প্রথম কাজে দিন মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সরকারি চিকিৎসকদের সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। গোটা রাজ্য থেকে ৬৭৫ জন চিকিৎসকের সেখানে যোগ দেবেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের কাজ বাদ দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এত জন চিকিৎসক মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সম্মেলনে যোগ দিতে গেলে রোগী পরিষেবার কী হবে, এই প্রশ্ন নিয়ে সোচ্চার হয়েছে বিরোধী বিজেপি। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৫০ জনের বেশি চিকিৎসক কলকাতা যাচ্ছেন। এতে চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ।
আজ সোমবার কলকাতার ধনধান্য স্টেডিয়ামে চিকিৎসকদের নিয়ে ওই সম্মেলন হচ্ছে। যার নাম রাখা হয়েছে 'চিকিৎসার আর এক নাম সেবা'। হাজির থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে রবিবার বিজেপি বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে প্রশ্ন তোলেন—‘মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কাছে জানতে চাই, ফরমান জারি করে ৬৭৫ জন চিকিৎসককে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় নিয়ে গেলে কী করে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে?’
শুভেন্দুর আরও বক্তব্য, ‘আরজিকর কাণ্ডে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গলদ নিয়ে চিকিৎসকেদের একটা বড় অংশ সরব হয়েছিলেন। তাই তাঁদের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা প্রকাশ করতেই কি এই সম্মেলন?’’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব সমস্ত মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, শিক্ষক চিকিৎসক, আবাসিক চিকিৎসক, মেডিকেল পড়ুয়া এবং মেডিকেল অফিসারদের ওই সম্মেলনে হাজির হতে হবে। কারা সম্মেলনে যাবেন তাঁদের নাম, মোবাইল নম্বর ও কোন দায়িত্বে আছেন, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠাতে হয়েছে।
চিকিৎসক মহলের কথায়, প্রত্যেক সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে সমস্ত হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগে রোগীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। এক সঙ্গে এত জন চিকিৎসক সম্মেলনে যোগ দিতে গেলে আউটডোর ও ইন্ডোরে রোগী পরিষেবা কী ভাবে সামলানো যাবে? কেন সম্মেলন ছুটির দিনে হল না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত কুমার দেওয়ান বলেন,"২০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে ঠিকই। তবে পাঁচ থেকে ছয় জন সম্মেলনে যাবেন বলে শুনেছি। যাঁরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, আয়ুষ চিকিৎসক তারাই যাচ্ছেন। এর ফলে চিকিৎসা পরিষেবা কোনও ভাবেই বিঘ্নিত হবে না।"
বিরোধীদের দাবি, চিকিৎসকদের উপর শাসক দল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণ কতটা রয়েছে, এবং চিকিৎসকদের মনোভাব মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি কী রকম, তা পরীক্ষা করে দেখাতে এ দিনের সম্মেলন ডাকা হয়েছে। যদিও সমাজমাধ্যমে শুভেন্দু অধিকারীর ‘পোস্ট’ কে কটাক্ষ করে তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন," চিকিৎসকেরা বিরোধীদল নেতা এবং বিজেপিকে ভরসা করে না। এ কথা বুঝতে পেরে উনি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)