Advertisement
E-Paper

সবেধন চিকিৎসকও অবসরপ্রাপ্ত, সঙ্কট

প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল রাতে। বৌমাকে নিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন শাশুড়ি মিনতি দুয়া। প্রাথমিকভাবে এক বৃদ্ধ চিকিৎসক দেখে বলেছিলেন, সমস্যা নেই। কিন্তু সারা রাত হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করা সত্ত্বেও আর চিকিৎসক আসেননি বলে অভিযোগ।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০১:০৮
শূন্য: ফাঁকা পড়ে হাসপাতালের শয্যা। নিজস্ব চিত্র

শূন্য: ফাঁকা পড়ে হাসপাতালের শয্যা। নিজস্ব চিত্র

প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল রাতে। বৌমাকে নিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন শাশুড়ি মিনতি দুয়া। প্রাথমিকভাবে এক বৃদ্ধ চিকিৎসক দেখে বলেছিলেন, সমস্যা নেই। কিন্তু সারা রাত হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করা সত্ত্বেও আর চিকিৎসক আসেননি বলে অভিযোগ। ভরসা রাখতে পারেননি মিনতিদেবী। বৌমা ঝুমা দুয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় নার্সিংহোমে। পরে সেখানেই সন্তানের জন্ম দেন ঝুমা।

কেশিয়াড়ি ব্লকের খাজরাবাড়ি উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় সগোরিয়ার বাসিন্দা মিনতিদেবীর ক্ষোভই বুঝিয়ে দিচ্ছিল এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার হাল। মিনতিদেবীর ক্ষোভ তাই সমর্থন করছিলেন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই। সকলেরই নালিশ, চিকিৎসক আর নার্সের অভাবে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে পরিষেবা। সামান্য অসুখেও ‘রেফার’ করা হচ্ছে রোগীদের। অগত্যা ছুটতে হচ্ছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। কেশিয়াড়ির ১০ শয্যার এই হাসপাতালে একজনও স্থায়ী চিকিৎসক নেই। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার প্রতুলকুমার মাজিকে দিয়ে কোনওমতে হাসপাতাল চলছে।

অথচ খাজরার এই হাসপাতালে স্থায়ী চিকিৎসকের পদ রয়েছে দু’টি। আর ৫জন নার্সের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩জন। একজন ছুটি নিলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না। তবে সব থেকে সমস্যায় অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক। বহির্বিভাগ আর অন্তর্বিভাগ দুইই সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। আর রাতে চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াই হাসপাতাল চলে বলে অভিযোগ। গিলাগেড়িয়ার বাসিন্দা শচীন পাত্র বলেন্, “টিভিতে দেখা যায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কত উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এখানে তো তার ছিঁটেফোঁটাও পাচ্ছি না।” একই সুরে বাগদিয়াশোলের মিহির দুয়ার বক্তব্য, “এক জন অবসর নেওয়া ডাক্তারকে দিয়ে কি আর হাসপাতাল চলে। তাই রোগী এলেই রেফার করা হচ্ছে।”

হাসপাতালের সবেধন চিকিৎসক প্রতুলবাবু বললেন, “এই বয়সে তো সারাদিন হাসপাতালে থাকা সম্ভব নয়। আর একজন চিকিৎসক হলে ভাল হয়।” সমস্যা যে চরমে পৌঁছেছে তা মানছেন নার্সরাও। হাসপাতালের নার্স রিনি সিংহ বলেন, “আমি কয়েকদিন আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলাম। তখন দু’জন নার্সের পক্ষে হাসপাতাল চালানোই মুশকিল হয়েছে।”

শুধু এই হাসপাতাল নয়, চিকিৎসক-কর্মীর অভাবে ধুঁকছে কেশিয়াড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। সেখানেও ৬জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছে ৪জন। বাকি দু’জন চিকিৎসক খাতায় কলমে থাকলেও অন্য হাসপাতালে রয়েছেন। আর ১২জন নার্সের পদে রয়েছেন ৯জন, ৮জন সাফাইকর্মীর পদে রয়েছেন ২জন, ১২জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদে রয়েছেন ৪ জন। ফলে, সমস্যা চরমে সেখানেও। কেশিয়াড়ির বাসিন্দা রাজকুমার দাস বলেন, “আমার স্ত্রী ভর্তি আছে। কিন্তু এখানে পরিষেবা একেবারে ভাল নয়।” যদিও বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি কেশিয়াড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তরণী শিট। তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “খাজরা হাসপাতালে সত্যি চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তবে কেশিয়াড়ি হাসপাতালে পরিষেবা না পাওয়ার কথা নয়। দেখছি কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায়।”

Doctor Medical Centre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy