Advertisement
E-Paper

জেল ফেরত দুই নেতাকে সাদরে বরণ বিজেপি-র

ছিলেন বিজেপি-র ব্লক স্তরের দুই নেতা। দিন দশেক আগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে রাতারাতি তাঁরা ‘দলের সম্পদ’। দলের সাংগঠনিক সভায় রাজ্য নেতাদের সঙ্গে এক সারিতে বসিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হল অর্ধেন্দু পাত্র ও তাঁর ভাই সুখেন্দু পাত্রকে। তৃণমূলের প্রাক্তনী অর্ধেন্দুবাবু গত এক বছর ধরে বিজেপি-র নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি এবং সুখেন্দুবাবু দলের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সদস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৪
সুখেন্দু পাত্রকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন সুভাষ সরকার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

সুখেন্দু পাত্রকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন সুভাষ সরকার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ছিলেন বিজেপি-র ব্লক স্তরের দুই নেতা। দিন দশেক আগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে রাতারাতি তাঁরা ‘দলের সম্পদ’। দলের সাংগঠনিক সভায় রাজ্য নেতাদের সঙ্গে এক সারিতে বসিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হল অর্ধেন্দু পাত্র ও তাঁর ভাই সুখেন্দু পাত্রকে। তৃণমূলের প্রাক্তনী অর্ধেন্দুবাবু গত এক বছর ধরে বিজেপি-র নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি এবং সুখেন্দুবাবু দলের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সদস্য। মঙ্গলবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বেসরকারি অতিথিশালায় বিজেপি-র এক কর্মী-প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হওয়ার আগে পাত্র ভাইদের সংবর্ধনা দেওয়া হল। দুই ভাইয়ের গলায় উত্তরীয় ও ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি সুভাষ সরকার, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামাপদ মণ্ডলের মতো রাজ্য নেতারা। এছাড়া বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা নেতাদের পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের বিভিন্ন মণ্ডল বা ব্লকস্তরের নেতারাও অর্ধেন্দুবাবু ও সুখেন্দুবাবুকে সংবর্ধনায় ভরিয়ে দিলেন।

বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিনই রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জঙ্গলমহলের গেরুয়া রাজনীতিতে পাত্র ভাইদের মর্যাদা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। রাজনৈতিক মহলের মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেল ফেরত পাত্র ভাইদের দলে ফেরাতে উদগ্রীব রয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। এর ফলে এদিন বিজেপি-র সংবর্ধনা-জ্ঞাপন অনুষ্ঠানটি রীতিমতো তাত্‌পর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকারও মানছেন, “জঙ্গলমহলে পুলিশ ও শাসক দলের লাগামহীন সন্ত্রাস ও মিথ্যা মামলায় আমাদের কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের পরেও পাত্র ভাইদের মতো নিচু তলার লড়াকু কর্মীরা বিজেপি-র রথ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। অর্ধেন্দুবাবু ও সুখেন্দুবাবুকে দলে যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে।”

এদিন দুই ভাইয়ের এমন অভিষেক পর্বে হাজির ছিলেন জঙ্গলমহলের নানা প্রান্ত থেকে আসা বিজেপি-র কর্মীরা। তাঁদের কথায়, গত বিধানসভা ভোটের সময় অর্ধেন্দু-সুখেন্দুরাই ছিলেন তৃণমূলের ‘ম্যাজিক মেকার’। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে নয়াগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েন পাত্র ভাইরা। বছর খানেক আগে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দুবাবু ও তাঁর ভাই সুখেন্দুবাবু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। পাত্র ভাইরা বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেই নয়াগ্রামে বিজেপি-র প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা এক ধাক্কায় ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত জানুয়ারিতে নয়াগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সব ক’টি আসনে প্রার্থী দেয় এবিভিপি। কলেজ ভোটের কয়েক দিন আগে গত ১৮ জানুয়ারি ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হন অর্ধেন্দুবাবু ও সুখেন্দুবাবু-সহ বিজেপি-র স্থানীয় ২৯ জন নেতা-কর্মী। পরে ২৭ জন জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। পাত্র ভাইদের রাষ্ট্রদ্রোহ ও খুনের পুরনো দু’টি মামলাতেও অভিযুক্ত করে পুলিশ। খুনের মামলায় জামিন না মেলায় টানা পাঁচ মাস পাত্র ভাইরা জেলবন্দি ছিলেন। দিন দশেক আগে দুই ভাই জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। পাত্র ভাইরা জেলবন্দি থাকায় গত পাঁচ মাস নয়াগ্রামে কার্যত কোনও রকম প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারে নি বিজেপি।

অর্ধেন্দুবাবু ও সুখেন্দুবাবুর জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, শাসক দলের একাংশের মধ্যস্থতায় দুই নেতার জামিন হয়েছে। পাত্র ভাইদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, তৃণমূলের নানা মহল থেকে নানা ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। অর্ধেন্দুবাবুর ছেলেকে চাকরির চোপ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পাত্র ভাইরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় উজ্জ্বীবিত বিজেপি শিবিরের শঙ্কা তাই কাটছে না। এ দিন সভায় নয়াগ্রামের এক কর্মী উঠে দাঁড়িয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, পাত্র ভাইদের বাদ দিয়ে জঙ্গলমহলে পরিবর্তনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। এদিন অর্ধেন্দুবাবু ও সুখেন্দুবাবু দু’জনেই সংবর্ধনার জবাবী ভাষণে আবেগতাড়িত হয়ে চোখের জল মুছে কৌশলী ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন। অর্ধেন্দুবাবু বলেন, “নয়াগ্রামের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। শাসক দল অপ্রপ্রচার করছে, আমরা নাকি তৃণমূলে ফিরে যাব। এটা ঠিক নয়।” সুখেন্দুবাবুর কথায়, “বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির দলাদলি বন্ধ করে যোগ্য নেতৃত্বের সন্ধান দেওয়া হোক। আগামী বিধানসভা ভোটে আমরা নয়াগ্রামের মতো অনেক বিধানসভা মোদীজিকে উপহার দেব।”

দামাল ছেলেদের ধরে রাখতে বিজেপি নেতৃত্ব কী করেন, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল!

Jail BJP leaders Nayagram Trinamool Jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy