Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

মানকচুর পাতাকেই সাজানো হয় দেবী রূপে

এলাকায় বক্সী বাড়ির দুর্গা পুজোর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে। জানাঘাটি গ্রামের সীমানাবর্তী ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকেও অনেকে আসেন পুজো দেখতে।

Bakshi Family Durga Puja of Gopiballavpur

বক্সী পরিবারের দুর্গা প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

রঞ্জন পাল
গোপীবল্লভপুর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩০
Share: Save:

ঐতিহ্যের পারিবারিক পুজোয় মৃন্ময়ী দেবী দুর্গার সঙ্গে পূজিতা হন তাঁর দুই সহচরী জয়া ও বিজয়া। তবে মূর্তি পুজোর আগে মহাসপ্তমীতে সুবর্ণরেখা থেকে দেবীর ঘট ওঠার পরে মানকচুর পাতাকে দেবীবেশে সাজিয়ে বিশেষ পুজো হয়। তারপরই শুরু হয় গোপীবল্লভপুরের জানাঘাটি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বক্সী পরিবারের দুর্গোৎসব।

বক্সী পরিবারের পুজোর এ বার ১৬১তম বর্ষ। প্রাচীনকালে গোপীবল্লভপুর এলাকাটি ছিল কলিঙ্গের অধীনে। পরবর্তীকালে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের রাজার অধীনে ছিল গোপীবল্লভপুরের তালুক। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে জানাঘাটি গ্রামের বক্সী পরিবারের আদি পদবি ছিল মহান্তী। ওই পরিবারের পূর্বসূরিদের আয়ুর্বেদশাস্ত্রে পারদর্শিতার জন্য ময়ূরভঞ্জের রাজা তাঁদের ‘বক্সী’ উপাধি দেন।

এলাকায় বক্সী বাড়ির দুর্গা পুজোর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে। জানাঘাটি গ্রামের সীমানাবর্তী ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকেও অনেকে আসেন পুজো দেখতে। এক সময় এলাকার রাস্তাঘাট ছিল না। তখন মানুষজন নৌকায় সুবর্ণরেখা পেরিয়ে, কাঁধে সাইকেল চাপিয়ে পুজো দেখতে আসতেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬১ বছর আগে তৎকালীন গৃহকর্তা শ্রীহরি বক্সী দুর্গা পুজো শুরু করেন। শ্রীহরি ছিলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। জনশ্রুতি, দেবীর স্বপ্নাদেশে বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন তিনি। পুজো হয় কালিকা hপূরাণ মতে। প্রাণীবলি দেওয়া হয় না। তবে সন্ধিপুজোয় চালকুমড়ো ও আখ বলির রীতি রয়েছে। শ্রীহরি বক্সীর নাতি নব্বই বছরের চিত্তরঞ্জন বক্সী জানালেন, তিনি ছাড়াও পরিবারের আরও তিন শরিক প্রদীপ বক্সী, প্রশান্ত বক্সী ও প্রবীর বক্সীর পরিবার পুজোর দায়িত্ব পালন করেন। পরিবারের চার শরিকের মধ্যে পালা করে প্রতি বছর কোনও এক শরিক পুজোর দায়িত্ব সামলায়।

বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে একচালার প্রতিমায় দেবীর আরাধনা হয়। মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের আগে একটি বড় মানকচুর পাতাকে শাড়ি পরিয়ে, সিঁদুর দিয়ে চক্ষুদান করে দেবীর অবয়ব দেওয়া হয়। নদী থেকে জলপূর্ণ ঘট এনে প্রথমে রাখা হয় চণ্ডীমণ্ডপের উঠোনে। মানকচুর বেশে দেবীপুজোর পর দেবীমূর্তির সামনে ঘট নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা। সপ্তমী থেকে নবমী তিন দিন দেবীর মহাস্নান ও ষোড়শোপচারে পুজো হয়। পুজোর তিনদিন এবং সন্ধিপুজোয় খিচুড়ি, পঞ্চব্যঞ্জন ও পায়েস নিবেদন করা হয়। সপ্তমীতে হোমকুণ্ড প্রজ্জ্বলনের পর সেই আগুন দশমী পর্যন্ত জ্বলে। মান্ত্রিক ঘট বিসর্জন প্রক্রিয়ার আগে হোমকুণ্ডে দেওয়া হয় পূর্ণাহুতি।

দশমীর সন্ধ্যায় প্রতিমা নিরঞ্জনের পর বক্সী পরিবারের স্বগোত্রীয়দের মঙ্গল কামনায় অপরাজিতা পুজো হয়। সবার হাতে বেঁধে দেওয়া হয় অপরাজিতার মাঙ্গলিক লতা। পরিবারের সদস্য তন্ময় বক্সী জানালেন, দেবীর দুই সহচরী জয়া ও বিজয়ার আলাদা পুজো ও সুই সহচরীর আলাদা পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া এই পুজোর রীতি। দশমীর দিন যে বারই পড়ুক সেই দিনই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gopiballavpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE